ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মহাসড়কে চাঁদায় চলে থ্রিহুইলার

নিজস্ব প্রতিবেদক | বগুড়া | প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বগুড়ায় নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় ও হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে মহাসড়কজুড়ে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মিশুক ও অটোভ্যানের মতো ছোট যানবাহন। দুর্ঘটনার পাশাপাশি এতে তৈরি হচ্ছে যানজট। এসব যানবাহন একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কখনো মাঝসড়ক দিয়ে, আবার কখনো উল্টো পথে চলাচল করছে। ফলে সড়কের শৃঙ্খলা আসছে না।

হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা ও চাঁদাবাজির কারণে মহাসড়কে এসব যান চলাচল করছে বলে অভিযোগ করেছেন দূরপাল্লার বাসের চালকেরা। আর যাত্রীরা বলছেন, মহাসড়কে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের গণপরিবহন না থাকায় এসব নিষিদ্ধ যানবাহন ব্যবহার করতে হয়।

জেলায় জাতীয় ও আঞ্চলিক মিলিয়ে মহাসড়কের আয়তন ১২৬ কিলোমিটার। এরমধ্যে ঢাকা-রংপুর ও দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক আর বগুড়া-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক আছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বলছে, ২০১৫ সাল থেকে সারাদেশের মতো এই তিন মহাসড়কেও থ্রি হুইলার (তিন চাকার যান) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মাটিডালি মোড় থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে নওদাপাড়া যাবেন একটি এনজিওতে কর্মরত কবির মাহামুদ। মহাসড়কে রিকশায় চড়া ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও কেন এসেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘মহাসড়কের এক স্থান থেকে স্বল্প দূরত্বে অন্য স্থানে যাওয়ার মতো গণপরিবহন নেই। বাধ্য হয়েই মহাসড়ক ধরে রিকশায় চলাচল করি।’

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বগুড়া-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের শাকপালা মোড়, ঢাকা-রংপুর ও দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কের বনানী মোড় ও মাটিডালিতে থি-হুইলার বাহনগুলোর স্ট্যান্ড রয়েছে। এই তিন স্ট্যান্ডের মধ্যে শাকপালায় জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র আলহাজ্ব শেখ, বনানীতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু এবং মাটিডালিতে শহর যুবলীগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হাবিল আকন্দ নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের দাপটে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান অবৈধ যানগুলো। এরজন্য চালকদের দিতে হয় দৈনিক ও এককালীন চাঁদাও।

বগুড়া জেলা মিশুক, বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির নামে স্ট্যান্ডে একজন চেইন মাস্টারের মাধ্যমে এই চাঁদার টাকা ওঠানো হয়। এই চেইন মাস্টারকে সহযোগিতার জন্য থাকেন দুইজন লাঠিয়াল। প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয় চালকদের।

এছাড়াও ওই সমিতিতে ভর্তির নামে প্রতি চালকের থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা না দিলে মহাসড়কে নামতে দেওয়া হয় না সিএনজি বা অন্য কোনো বা বাহনের চালকদের। এভাবে প্রতি মাসে চালকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা ওঠানো হয়।

৪৪ বছর বয়সী সোবহান (ছদ্মনাম) তিনি প্রায় ৬ মাস যাবত শাকপালা থেকে নন্দীগ্রাম সড়কে সিএনজি চালাচ্ছেন। এই মহাসড়কে সিএনজি চালানোর অনুমতি পেতে তাকে সমিতিতে ভর্তি হতে হয়েছে। আর এজন্য তাকে গুণতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এরআগে ভর্তি না হওয়ায় সমিতির লোকজন অন্তত ৫ বার তার সিএনজি আটকে রাখে। পরে টাকা দিয়ে মেলে অনুমতি।

মহাসড়কে চাঁদায় চলে থ্রিহুইলার

ঢাকা-রংপুর ও দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবজি না থাকলেও নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের শাকপালা থেকে নন্দীগ্রাম অংশে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে মাসিক এক হাজার টাকা চুক্তিতে এই থি-হুইলার বাহনগুলো চলাচলের অনুমতি পায়। মহাসড়কের এই অংশে অন্তত ৩০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। কৌশল হিসেবে প্রতি মাসে টোকেনের নকশা বদলানো হয়। গত কয়েক মাসে এক যুবক লাল রঙের দুই পতাকা হাতে ও ইংরেজি দুই অক্ষরকে নকশা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে গাড়ির স্টেয়ারিংয়ে চালকের হাত টোকেনের নকশা হিসেবে চালকদের সরবারহ করেছে পুলিশ।

তবে পুলিশ সরাসরি এই টাকা সংগ্রহ বা টোকেন বিতরণ করে না। নির্ধারিত ‘কলার বয়’র মাধ্যমে চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় ও টোকেন সরবারহ করা হয়। কুন্দুরহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের কলার বয় হিসেবে পরিচিত মোমিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি থানার পাশে বাসট্যান্ড এলাকায় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ব্যবসা করেন।

জানতে চাইলে চাঁদাবাজির ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন, আপনারা সবই জানেন, অজানা কিছু নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে একটা থানা চালাতে হয়, আপনিও বোঝন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন স্ট্যান্ডের অন্তত ৫০ জন সিএনজি চালকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তারা বলেন, কাউকে বলার বা করার কিছু নেই। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। এজন্য পুলিশ ও সমিতির নেতাদের ম্যানেজ করেই চলাচল করতে হয়। মহাসড়কের পাশে ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেন থাকলেও সবসময় নিয়ম মানা সম্ভব হয় না। আগে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মাসিক চাঁদা দিতে হতো। এখন শুধু বগুড়া-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কে চাঁদা দিতে হয়।

পুলিশের চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেন শাকপালা স্ট্যান্ডের দায়িত্বে থাকা যুবলীগ নেতা আলহাজ্ব শেখ। তিনি বলেন, কুন্দুরহাট হাইওয়ে পুলিশ টাকা নেয় বলে শুনেছি। তবে পুরো বিষয়টি নন্দীগ্রাম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা যেই টাকা উঠায় সেই টাকা চালকদের কল্যাণে ব্যয় হয়। এছাড়াও পরিচয় নিশ্চিতের জন্য সমিতিতে ভর্তি করানো হয়। যে যেমন পারে টাকা দেয়। কাউকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।

টাকা ওঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী স্ট্যান্ডের দায়িত্বে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু মুঠোফোনে সাড়া দেননি। তবে সমিতির টাকা চালকদের কল্যাণেই ওঠানো হয় বলে দাবি করেছেন মাটিডালি স্ট্যান্ডের দায়িত্বে থাকা যুবলীগ নেতা হাবিল আকন্দ।

অপরদিকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে কুন্দুরহাট হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্বাস আলী বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ সবরকম নিষিদ্ধ বাহন বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য নয়। মোমিন নামের কাউকে চিনি না। তবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে।

হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া জোনের সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, অবৈধ যানবাহন বন্ধে আন্তরিকতার অভাব নেই। নিয়মিত মামলার পাশাপাশি সচেতনা কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে কোনো পুলিশ সদস্যের চাঁদাবাজির সুযোগ নেই। তদন্ত করে সত্যতা পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/এমএস