লিচুর রাজ্যে গাছে গাছে মুকুল, বাম্পার ফলনের আশা
লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত ও দেশব্যাপী লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরের লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে সারাদেশে কম-বেশি লিচু চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচুর আলাদা কদর রয়েছে। রসালো এই লিচু অনেকের কাছে প্রকৃতির রসগোল্লা হিসেবে পরিচিত।
লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর দিনাজপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই জেলায় লিচুচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে তাদের আশা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, গতবার দিনাজপুর জেলায় ৪ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এবার এখনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে দিনাজপুরের ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল আলীম জানান, গত বছর দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন ২৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যায়। এবার লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী গণ্ডি ছাড়িয়ে গত বছর রপ্তানি হয় বিদেশেও। এবছর এরইমধ্যে লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলন ভালো হবে।
কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কোন সময়ে কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি, গোলাপী ও কাঠালী উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙিনার লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুকুলের সঙ্গে ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝিঁ ঝিঁ শব্দে এলাকা মুখরিত।
বাগানগুলোতে ফুল আসা থেকে লিচু আহরোণ পর্যন্ত ৩-৪ মাস লিচু বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল আসার ১৫ দিন আগে এবং ফুল আসার ১৫ দিন পর সেচ দিতে হয়। সেই অনুযায়ী গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই মুকুলকে টিকিয়ে রাখতে স্প্রে করছেন চাষিরা।
দিনাজপুরের যেসব স্থানে লিচু চাষ হয় তার মধ্যে সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামা উপজেলা অন্যতম।
মাসিপুরের লিচুচাষি নজরুল ইসলাম জানান, ফুল আসার আগেই লিচু গাছের পরিচর্যা করতে হয়। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। লিচু গাছগুলোতে ফুল আসতেই ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা বাগানে বাগানে গিয়ে খবর নিচ্ছেন। অনেকে আগাম লিচু বাগান ক্রয় করছেন।
এফএ/জেআইএম