ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

টুল-পিঁড়িতে চুল কেটে ৫০ বছর পার আনন্দ শীলের

আমিন ইসলাম জুয়েল | প্রকাশিত: ০৬:২৮ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

একটা সময় গ্রামীণ হাট-বাজারে টুল-পিঁড়ি পেতে চুল-দাড়ি কাটানোর দৃশ্য ছিল অতি পরিচিত। সারি সারি করে বসতেন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দররা। সেই দৃশ্য এখন যেন হারাতে বসেছে। তবে অর্ধশত বছর এখনো এ পেশায় রয়ে গেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার আনন্দ শীল (৬৫)। তিনি বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের রাকসা মহল্লার বাসিন্দা।

সম্প্রতি রাকসা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আনন্দ শীল হাটের পুরোনো মাছ বাজারের পরিত্যক্ত একটি ঘরে বসে চুল ও দাড়ি কাটার কাজ করছেন। দোকানে ছোট একটি টুল। সেই টুলে বসে কাস্টমারদের চুল দাড়ি কেটে দিচ্ছেন। তার কাছে আসা লোকজন নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির।

চুল কাটাতে আসা শাহজাহান উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আনন্দ দা ফুটপাতের নাপিত হলেও তার কাজ খুব ভালো। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাটে এসে তার কাছে চুল কাটাতাম। এখন আমি ছেলেকে এনে চুল কাটাই।’

টুল-পিঁড়িতে চুল কেটে ৫০ বছর পার আনন্দ শীলের

স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দশক আগেও দেশের বিভিন্ন হাট-বাজার ও প্রত্যন্ত গ্রামে আনন্দ শীলের মতো ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের চুল-দাড়ি কাটানোর দৃশ্য চোখে পড়তো। মূলত হাট-বাজারে ইটের ওপর অথবা পিঁড়িতে বসিয়ে কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা মানুষের চুল-দাড়ি কেটে দিতেন। বর্তমানে এমন নরসুন্দরদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। হঠাৎ প্রত্যন্ত এলাকার কোনো হাটে দু-একজনের দেখা মেলে। তাদের নির্দিষ্ট কোনো বসার জায়গা নেই। যেখানে সুযোগ পান সেখানেই চুল-দাড়ি কাটার সরঞ্জাম ও বসার ইট-পিঁড়ি নিয়ে বসে পড়েন।

আনন্দ শীলের নিয়মিত কাস্টমার বকচর গ্রামের তপন শেখ। তিনি বলেন, ‘কামলার কাজ করি। সেলুনে চুল ও দাড়ি কাটাব্যার গেলি কমপক্ষে ৬০ টাকা লাগে। কিন্তু এনার কাছে মাত্র ৩০ টাকাতেই চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। সেলুনের চাইতে এনার কাজ কোনো অংশে খারাপ না।’

নরসুন্দর শ্রী আনন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী এ বাজারে এভাবেই দাড়ি ও চুল কাটছেন তিনি। নতুন ভারেঙ্গা, বকচর, বক্তারপুর, চকপাড়া, সোনাপদ্মা এলাকা থেকে বাজারে আসা মানুষ তার কাস্টমার। চুল ও দাড়ি কেটে সংসার চলে তার। চুল কাটতে ২০-৩০ টাকা এবং শেভ বা দাড়ি ঠিক করতে ১৫-২০ টাকা নেন।

টুল-পিঁড়িতে চুল কেটে ৫০ বছর পার আনন্দ শীলের

আক্ষেপ করে নরসুন্দর আনন্দ শীল জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় ম্যালা (অনেক) মানুষ হাট-বাজারে ঘুইর্যা নাপিতের কাজ করতো। কিন্তু এখন এই এলাকায় আমি ছাড়া আর তেমন কেউ নাই। হাট-বাজারে কাম কইর্যা যে আয় হয় তাতে সংসার ঠিকমতো চলে না। সেলুনে কাজ করলি এর চাইতে আয় কিছুটা বেশি হতো।’

স্থানীয় হুমায়ূন কবির বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবা রাকসা বাজারে চুল কাটাতে নিয়ে যেতেন। টুলের ওপর বসে হাঁটুর ওপর মাথা রেখে চুল কাটাতে গিয়ে অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়তাম। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন রূপকথার মতো মনে হবে।’

নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবু দাউদ বলেন, সভ্যতার বিবর্তনে মানবজীবনের গতিধারায় পরিবর্তন হয়েছে। নতুনত্বের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাট-বাজারে পিঁড়িতে বসা সেলুনগুলা। নরসুন্দরদের স্থান দখল করে নিয়েছে নামিদামি সেলুন। আশি নব্বইয়ের দশকে এভাবে পিঁড়িতে বসে মানুষের চুল-দাড়ি কাটার সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না।

এসআর/জেআইএম