বিষখালীর বুকে চর
চরে আটকালেই শুরু হয় জোয়ারের অপেক্ষা
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলার একটি নদী বিষখালী। নদীর মাঝে বেশ কয়েকটি স্থানে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে নৌযান। যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগের স্বীকার হতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ডুবোচরে নৌযান আটকে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জোয়ারের অপেক্ষায় থাকতে হয়। নৌ পুলিশের ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় অপেক্ষার সময় কাটে নৌযান সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, ঝালকাঠির সুগন্ধা, গাবখান, ধানসিঁড়ি নদীর মোহনা থেকেই বিষখালী নদীর উৎপত্তি। সদর উপজেলার বুকচিরে গাবখান-ধানসিঁড়ি ও পোনাবালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে দক্ষিণে বয়ে গেছে। সামনে কিছুদূর গেলেই জেলার অন্তর্গত রাজাপুরের বড়ইয়া ও নলছিটির নাচনমহল ইউনিয়ন নদীর দু’তীরে পড়েছে। আরও কিছুদূর এগোলে একপাশে জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলা ও অপরপাশে বরগুনার বামনা উপজেলা। এভাবেই ১০৫ কিলোমিটার (৬৫ মাইল) প্রবাহমান হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে বিষখালী নদী।
তবে নদীজুড়ে প্রায় অর্ধশত ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। চরের কারণে নদীতে যাত্রীবাহী নৌযান, সমুদ্রগামী জাহাজসহ ফিশিং বোট চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। জাহাজ এবং ফিশিং বোটগুলোকে ভাটার সময় ৫-৭ ঘণ্টা পর্যন্ত নদীর মাঝখানে নোঙর করে থাকতে হয়। ঝালকাঠির সুগন্ধা, গাবখান, ধানসিঁড়ি নদীর মোহনা থেকেই বিষখালী নদীর উৎপত্তিস্থলেই রয়েছে বিশাল চর। একপাশে সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চরভাটারাকান্দা ও অপরপাশে পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রাম। মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে দক্ষিণে বয়ে গেছে বিষখালী নদী। নদীর পূর্বপ্রান্তে দিয়াকুল এলাকায় চর পড়েছে এবং অপরপাশে চরভাটারাকান্দা এলাকা এখন ভাঙনের কবলে।
কয়েক কিলোমিটার সামনে গেলে নদীর পূর্বপাশে দেউরী গ্রাম এবং পশ্চিমে চরসাচিলাপুর-কিস্তাকাঠি গ্রাম। দেউরী গ্রামে ভাঙনের ফলে সাইক্লোন শেল্টারটির একাংশও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে এখন তা পরিত্যক্ত ভবন। অপরপ্রান্তে জেগে উঠেছে ডুবোচর। এভাবে ১০৫ কিলোমিটার নদীর এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত চর।
ঝালকাঠি জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সদর উপজেলা, নলছিটি ও রাজাপুরের একাংশের হাজারো জনসাধারণ প্রতিদিন এ নৌপথে ট্রলার এবং ছোট লঞ্চে যাতায়াত করে। পূর্ণভাটার সময় চর দেখা গেলেও অন্যান্য সময় চর বোঝা যায় না। কোনো কোনো সময়ে চরের ওপর ২-৩ ফুট পানি থাকে। ডুবোচরের কারণে ট্রলার বা লঞ্চ অনেকসময় আটকা পড়লে নোঙ্গর করে বসে থাকতে হয়। নিরুপায় হয়ে ৫-৬ ঘণ্টাও বসে থাকতে হয় জোয়ারের অপেক্ষায়।
২০০৭ সালে ভয়াবহ সিডরের রাতে মধ্য বঙ্গোপসাগরে প্রচণ্ড ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হওয়ায় তলদেশের বালু উপরে চলে আসে। এতে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতায় পানি আছড়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকায়। তখন রক্ষা পায়নি বিষখালী নদীও। নদীর তলদেশে জমে ওঠে বিশাল বালুর স্তূপ। এর ওপর ধীরে ধীরে পলি জমে বর্তমানে ব্যাপক এলাকাজুড়ে বেশ কয়েকটি ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলার কচুয়া ও বরগুনা জেলার বামনা ফেরিঘাট এলাকায় অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। ভাটার সময় প্রায় ২-৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘুরে ফেরি চলাচল করতে হয়। অনেক সময় চরে আটকে গিয়ে জোয়ারের জন্য দু’এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। পুরো নদীই যেন ধীরে ধীরে চরে ভরে যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ডুবোচরের কারণে বিষখালী নদীর স্বাভাবিক গতিপথ হ্রাস পেয়েছে। ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা জানান, চার নদীর মোহনাস্থলে যে চর পড়েছে তা খননের জন্য আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম কিন্তু পাস হয়নি। তাই আমরা অপরপ্রান্তের চরভাটারাকান্দা এলাকায় বাঁধ দেওয়ার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বাঁধ দিলে ভাঙন রোধ হবে, সেইসঙ্গে নদীর গতিপথের পরিবর্তনের ফলে মোহনাটি বর্তমানের চেয়ে প্রশস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, নদীর যেসব স্থানে চর পড়েছে তা ড্রেজিংয়ের জন্য পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। তা অনুমোদন হয়নি। এবং যেসব স্থান ভাঙনের কবলে আছে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা না থাকায় ভাঙন রোধেও জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে নতুন করে বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে বন্যা হলেই আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এফএ/এমএস