ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পাবনায় মাসব্যাপী বইমেলায় বসন্তের আমেজ

আমিন ইসলাম জুয়েল | পাবনা | প্রকাশিত: ১০:১৯ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শতবর্ষী ঐতিহ্যের পাবনা জেলায় প্রতি বছরই একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে রেখে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবারও যথারীতি এর আয়োজন করেছে বইমেলা উদযাপন পরিষদ। রাজধানী ঢাকার বাইরে মফস্বল শহরে পাবনাতেই সবচেয়ে বড় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ভাষার আর ভালবাসার মাসে অনুষ্ঠিত বইমেলাকে ঘিরে বসন্তের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে পাবনায়। দিন যতই যাচ্ছে জমে উঠেছে অমর একুশে বইমেলা।

শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। মেলার আয়োজন করেছে ১৩৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী গণগ্রন্থাগার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি। মেলায় বই কেনাবেচার পাশাপাশি চলছে বই নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলার দিন বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে মানুষের ভিড়। বিভিন্ন বয়সী মানুষের আগমনে জমজমাট পাবনার বইমেলা প্রাঙ্গণ।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, মেলায় ঢাকার প্রথমা প্রকাশন, পাবনার মহীয়সী প্রকাশনী, পাঠক আড্ডা, পাঠশালা এবং বিকিকিনিসহ বিভিন্ন প্রকাশনী ও পুস্তক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত রয়েছে।

পাবনায় মাসব্যাপী বইমেলায় বসন্তের আমেজ

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রধান ফটক থেকে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ মানুষে ঠাসা। কেউ বই কিনছেন, কেউ বা আড্ডায় মেতে আছেন। অনেক আবার মেলা মঞ্চের সামনে বসে উপভোগ করছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আরেকদিকে ভিড় ঠেলে স্টলে স্টলে বই খুঁজে বেড়াচ্ছেন বই প্রেমীরা। বাবা মায়ের হাত ধরে শিশুরা আসছে বই মেলায় । কিনছে তাদের পছন্দের সব বই। ভাষা আর ভালোবাসার মাসে তরুণ প্রজন্ম এক বার হলেও ঘুরে যাচ্ছে বইমেলায়।

কলেজ ছাত্র সাগর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রিয় লেখকদের বই কিনে খুব খুশি লাগছে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন বই পড়ার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করা হয়। এটাও একটা ভাল দিক।’

পাবনা জেলা স্কুলের ছাত্র সুমন হাসান জানান, ‘বন্ধুর সাথে বই মেলায় এসেছি। প্রতি বছরই বই মেলায় আসি। বিভিন্ন ধরণের বইয়ের মধ্যে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীগুলো ভাল লাগে।’

তাসকীন নামে মেলায় আসা এক শিশু শিক্ষার্থী জানায় সে মেলা ঘুরছে। পছন্দের বই কেনার জন্য বাবার সঙ্গে সে এসেছে।

পাবনায় মাসব্যাপী বইমেলায় বসন্তের আমেজ

গৃহিণী ফাতিমা খাতুন জাগো নিউজকে জানান, তার বাচ্চার জন্য তিনি বই মেলায় এসেছেন। শিশুর জন্য তিনি দুই হাজার টাকার শিশুতোষ বই কিনেছেন। তিনি জানান, শিশুকে মোবাইল গেম বা কার্টুন দেখানো কমাতে বেশি করে বই কিনে দিচ্ছেন।

এনজিওকর্মী আব্দুর রব মন্টু জানান. তিনি দেড় যুগ ধরে মেলায় আসছেন। তিনি এত বছরে নবীন থেকে প্রবীণের কাতারে চলে গেছেন। এ মেলা শুধু বই মেলা নয়, এটা এখন পাবনার মানুষের প্রাণের মেলা।

সংস্কৃতিকর্মী নাসরীন পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, পাবনা বই মেলা পাঠক তৈরি করে, লেখক তৈরি করে, প্রকাশক তৈরি করে। এ মেলা অমাদের প্রাণের মেলা। পাবনা বই মেলাকে ঘিরে সারা বছর অধীর আগ্রহে থাকেন বই প্রেমীরা। মেলা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বইপ্রেমীদের ভিড়ে।

মেলায় আসা স্কুল শিক্ষক সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘বসন্তের হাওয়া বইছে বই মেলায়। বইয়ের মেলা যেন হাজরো প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে।’

বই মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য এবং বৌটুবানী পাঠাগারে কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই বই মেলাকে ঘিরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল বই প্রেমীরা। দেশে শুধুমাত্র ঢাকা ও পাবনা জেলায় মাসব্যাপী বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বইপ্রেমীদের ভীড় পরিণত হয়েছে এক মিলন মেলায়।

পাবনায় মাসব্যাপী বইমেলায় বসন্তের আমেজ

কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মানুষের ভিড়ে অতিষ্ঠ হলেও প্রাণ ভরে গেছে। বইয়ের প্রতি মানুষের প্রেম বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।’

অন্যদিকে বেচাকেনা ভালো হওয়ায় হাসি চওড়া হয়েছে প্রকাশকদের। বই মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশক আর.কে আকাশ জানান, অনেকের ধারণা এখন ফেসবুক ইউটিউব এর যুগ। মুদ্রিত বইয়ের দিন বুঝি শেষ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। গত কয়েক বছর ধরে তার নীলাকাশ প্রকাশনী পাবনা বই মেলায় অংশ নিচ্ছে। তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান গত ৩-৪ বছর আগে যত বই বিক্রি হয়েছে এবার তার চেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়েছে। এবার মেলার শুরুর দিন থেকেই প্রচুর পাঠকের সমাগম হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, নতুন লেখকদের বই বিক্রি হচ্ছে। আবার পাবনার অনেক প্রকাশকের বই এবারের মেলায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রথমা প্রকাশনের স্টল ব্যবস্থাপক রিয়াজ হোসেন বলেন, এবার মেলায় নতুন বই বেশি এসেছে। তাই বিক্রিও ভালো।

শিক্ষাবিদ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, পাবনাতে নতুন পাঠক, লেখক ও প্রকাশক তৈরিতে এ বইমেলা বিরাট ভূমিকা রাখছে। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে। কারণ একটি ভালো বই শিশুর জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আগামী প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য বই পড়াটা তাদের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। পাবনার এ বইমেলা সেক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখছে।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এনআইবি/এমএস