দখলে ফুটপাত, ঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ
জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদারীপুর সরকারি কলেজের পেছনে কলেজ রোড এলাকার ফুটপাতটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। ফুটপাতে টিনশেড দোকান নির্মাণ করে ভাড়াও দিচ্ছেন তারা। তাছাড়া কলেজের পেছনের পুরো অংশজুড়ে ফুটপাতটিতে আশপাশে লোকজন ইট-বালুসহ তাদের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে দখল করে রেখেছেন। সেইসঙ্গে ফুটপাতের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। এতে করে রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদারীপুর সরকারি কলেজ। এছাড়াও কলেজের পেছনের এই সড়কটি কলেজ রোড এলাকা নামে পরিচিত। এটা শহরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক। এই সড়ক দিয়ে সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। এমনকি শহরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরানবাজারেও যাতায়াত করেন শহরবাসী। অথচ পৌরসভার ব্যস্ততম এই সড়কটির ফুটপাত দিনে দিনে দখল ও ময়লা আবর্জনায় ভরে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে দিন দিন এটি যে যার মতো করে দখল করে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের পেছনের গেটের সামনে কলেজের দেওয়াল ঘেঁষে ফুটপাত দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে টিনশেডের চারটি দোকানঘর। এর কিছুদূরে আরও দুইটি দোকানঘর আছে। এছাড়াও কলেজের পেছনের পুরো সীমানা দেওয়াল ঘেঁষে ফুটপাতের ওপর বিভিন্ন স্থানে ইট-বালু, ইটের খোয়া রাখা আছে। ভাঙা চেয়ার টেবিল, বস্তায় ভরা মালামাল, কাঠসহ নানা পরিত্যক্ত জিনিসপত্রও রাখা আছে। এছাড়াও কলেজের রাস্তার ড্রেন ও কলেজের সীমানার দেওয়ালের পাশ ঘেঁষে ময়লা-আবর্জনা ফেলে তা নোংরা করা হয়েছে। যা থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।
তাছাড়া কলেজ রোড সংলগ্ন ডিসিব্রিজ এলাকাটির ফুটপাতও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে। তারা তাদের ব্যবসার প্রয়োজনে যে যার দোকান ও হোটেলের সামনে প্রয়োজন অনুযায়ী দখল করে ব্যবহার করছেন। এতে করেও সাধারণ মানুষ এই ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারছে না। তাদের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে নেমে চলাচল করতে হচ্ছে।
সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্রী মিম ইসলাম বলেন, কলেজের পেছনের পুরো রাস্তার ফুটপাতটির বেহাল দশা। সড়কের পুরো অংশের ফুটপাতে সাধারণ মানুষ হাঁটতে পারছে না। যে যার মতো দখল করে নিজেদের কাজে লাগিয়েছে। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলেও হাঁটার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে।
সরকারি কলেজের ছাত্র মো. জাহিদ খান বলেন, দিন দিন কলেজে পেছনের রাস্তাটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেলেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। তাছাড়া ফুটপাতের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে যেভাবে নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এখান দিয়ে হাঁটা মুশকিল। এতবড় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনে পাশাপাশি ব্যস্ততম এই জনবহুল সড়কের অবস্থা যদি এই হয় তাহলে অন্যগুলোর কী অবস্থা। তাই পৌরকর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ অভিযান চালিয়ে এগুলো বন্ধ করা হোক।
স্থানীয় আনোয়ার হোসেন, মো. ইকবাল, সীমা আক্তারসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই এই অবস্থা। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। দিন দিন ফুটপাত দখলের পাশাপাশি ও ময়লা-আবর্জনা বেড়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, এ ব্যাপারে আমরা মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলা হয়েছে, আমরা ফুটপাত দখলের ব্যাপারে শিগগিরই অভিযানে যাবো। তখন যেন প্রশাসন থেকে আমাদের সমর্থন দেওয়া হয়। তাছাড়া আমরা এরইমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যেন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন এবং মানুষজনকে সচেতন করেন।
রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র বলেন, মাদারীপুরে প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। তারা শহরের মধ্যে জমি কিনে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। পরে তা ভাড়া দিয়ে আবার বিদেশ চলে যাচ্ছেন। এতে করে শহরে জনসংখ্যার চাপ বেড়েছে। পরবর্তীতে ওই ভাড়াটিয়ারা কোনো নিয়মকানুন না মেনে ইচ্ছামতো যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছেন। এ ব্যাপারেও অভিযান চালানো হবে।
এফএ/জেআইএম