করোনার নতুন উপধরন
যন্ত্রপাতির অভাবে বেনাপোল চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যাহত
করোনার জেএন. ১ নতুন উপধরন সংক্রমণ রোধে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারীদের আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিলেও তা সম্ভব হচ্ছে না থার্মাল স্ক্যানিংসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে। দীর্ঘদিন ধরে ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগে পূর্বের থার্মাল স্ক্যানিংসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী হ্যান্ড থার্মাল মেশিন কপালে ধরে তাপমাত্রা দেখছেন যাত্রীদের। যেখানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে সেখানে একটি হ্যান্ড থার্মাল মেশিনে কতজনের তাপমাত্রা মাপা যাবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এ পথে যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীরা। এ পথে ভারতসহ অন্যান্য দেশের যাত্রীরাও আসছেন। তাদের দেহে এ নতুন সংক্রামক আছে কিনা তা শনাক্তেরও কোনো উপায় নেই।
তবে স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, থার্মাল স্ক্যানারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ এসব যন্ত্র সচল হবে বা নতুন মশিন আসবে সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ উত্তর দিতে পারছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৪ বছরে করোনার আগ্রাসনে জীবন হারিয়েছেন ২৯ হাজার ৪৮১ জন বাংলাদেশি। ভারতে কোভিডে মৃত্যুর সরকারি পরিসংখ্যানে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এত মৃত্যু আর অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে আস্তে আস্তে মানুষের জীবন যাপন যখন স্বাভাবিকের পথে ঠিক তখন করোনার জেএন.১ নতুন উপধরন ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্বকে। এরইমধ্যে ভারতসহ বিশ্বের ৪১ দেশে নতুন এ উপধরন ছড়িয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ আগাম সতর্কতা নিয়েছে। এতে দেশের সব বন্দরে আবারও স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সুরক্ষা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগে পূর্বের থার্মাল স্ক্যানিংসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত ও সংক্রমণের এ ঝুঁকি বাড়ছে। কেবল হ্যান্ড থার্মাল দিয়ে নামমাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে যাত্রীদের। প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দেশি-বিদেশি ৭ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত ও ৫০০ পণ্যবাহী ট্রাকসহ দেড় সহস্রাধিক ট্রাক চালকেরা আসা যাওয়া করেন। এদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের আগ্রহও কম দেখা গেছে।
তবে সচেতন যাত্রীরা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে পথ এগোতে হবে। আর এ সতর্কতা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে পূর্বের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দেশি-বিদেশি ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত ও ৬ থেকে ৭০০ পণ্যবাহী ট্রাক এবং দেড় হাজারের বেশি ট্রাকচালক-হেলপার আসা যাওয়া করেন। তাদের মাধ্যমেও করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে। পাসপোর্টযাত্রীদের পাশাপাশি তাদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রী আসলাম জানান, ঘরে বসে থাকলে জীবন চলবে না। সরকারের নির্দেশনা মেনে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে পথ চলতে হবে। আর এ সতর্কতা কেউ না মানলে আবারো বিগত দিনের মতো করোনা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
পাসপোর্টযাত্রী কবির হোসেন জানান, চিকিৎসার জন্য পরিবারের সঙ্গে ভারতে যাচ্ছেন। বন্দর ও কাস্টমসের স্বাস্থ্য বিভাগে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা সচেতনতার বিষয়ে কিছু বলেননি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার মরিয়ম খন্দকার জানান, করোনার নতুন উপধরন জেএন. ১ রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ সুরক্ষা বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে জেএন. ১ যাত্রীদের সচেতন করতে ও হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে সন্দেহভাজন যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে।
তিনি বলেন, থার্মাল স্ক্যানারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নষ্ট থাকায় কেবল হ্যান্ড থার্মাল দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। তবে আধুনিক যন্ত্রাংশের যোগান পাওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ এসব যন্ত্র মেরামত হবে তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
এফএ/জেআইএম