ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

একই স্টেশনে ৭ বছর

অফিসকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা

আহসানুর রহমান রাজিব | প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪

নিজ সরকারি পদকে কাজে লাগিয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে লুটপাটের আখড়া বানিয়েছেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান। নিয়ম বহির্ভুতভাবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে চাকরি দিয়েছেন স্ত্রী জেসমিন নাহারকে। একই স্টেশনে সাত বছর থাকার সুবাদে তিনি ১০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারী শিক্ষকদের দাবি, এসব বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্ত হলেও এক অদৃশ্য খুঁটির জোরে তিনি বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদসহ পাঁচজন শিক্ষক। শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে আরও একজন শিক্ষক অস্থায়ী জামিনে আছেন।

নাশকতার মামলায় জেলহাজতে যাওয়া সিটি কলেজের জামায়াত নেতা জাহাঙ্গীর আলম ২০০২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্যাটার্ন বহির্ভূত দর্শন বিভাগে অনার্সের চতুর্থ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তথ্য জালিয়াতি করে দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নীরিক্ষা অধিদপ্তরে ২০১২ ও ২০১৭ সালে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২১ জন শিক্ষক যে অবৈধভাবে ও জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন তদন্তে তা প্রমাণিত হয়। এমপিওভুক্তির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নীরিক্ষা অধিদপ্তর সাতক্ষীরা সিটি কলেজে পরিদর্শন ও নীরিক্ষা শেষে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীর আলমসহ ২১ জন শিক্ষকের এমপিও বিধিসম্মত নয় বলে উল্লেখ করে তাদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এছাড়া দুদকের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক হারুন অর রশিদ সিটি কলেজের ২১ জন শিক্ষককে অবৈধ এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি তদন্ত করে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর তার প্রতিবেদন জমা দেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, এর দায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান এড়াতে পারেন না। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমসহ ২১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও ৬৩ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের ফাইল ছাড় করান জাহিদুর রহমান। একই সময়ে প্রভাষক পদে পদোন্নতি পাওয়া ১৫ জন সহকারী অধ্যাপকের কাছ থেকে তিনি ঘুস নিয়েছিলেন সাড়ে সাত লাখ টাকা।

এছাড়া টাকা আর ক্ষমতার জোরে অধ্যক্ষ এমদাদ হোসেন ও সভাপতি জামায়াত নেতা প্রয়াত খালেক মণ্ডলকে ম্যানেজ করে ২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল জাহিদুর রহমান অবৈধভাবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে স্ত্রী জেসমিন নাহারকে একইদিনে নিয়োগবোর্ড, একইদিনে নিয়োগ ও যোগদান করান। কারণ ২০০৫ সালের ২০ এপ্রিল শিক্ষক নিবন্ধন ও কর্তৃপক্ষ আইন চালু হলে জেসমিন নাহার আর নিয়োগ পেতেন না।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের এক সময়কার হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিধান চন্দ্র দাস জাগো নিউজকে জানান, সিটি কলেজে ও শ্যামনগরের হিঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে কাজ করা রুনা লায়লাকে বিধি বহির্ভুতভাবে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে চরম অপমান করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, সরকারি পরিষেবা পেতে জাহিদুর রহমানকে প্রত্যেক খাতে খাতে ঘুস দিতে হয়। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বই পেতে তাকে দিতে হয় স্কুল প্রতি চার থেকে পাঁচশো টাকা। সদর উপজেলার ১০২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো পাঠ্যপুস্তকের পরিবহন ব্যয় বাবদ সরকারি ৯৮ হাজার টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সময় মাউশির প্রতিনিধি হিসেবে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা তাকে বাধ্যতামূলক ঘুস দিতে হয়। এছাড়া নতুন এমপিওকরণের জন্য তাকে শিক্ষকপিছু ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।

এছাড়া শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও রয়েছে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ করায় ধুলিহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রবিউল ইসলাম মন্টুকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

রবিউল ইসলাম মন্টু জাগো নিউজকে জানান, প্রতিবেদন পক্ষে দেওয়ার জন্য জাহিদুর রহমান তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন বলেন, সাবেক এমপি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় আমাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহম্মেদ বলেন, একই স্টেশনে কোনো কর্মকর্তার সাত বছর থাকার সুযোগ বা নিয়ম নেই। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের বিরুদ্দে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা সদর আসনের নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু জাগো নিউজকে বলেন, আমি কিছুদিন আগে নির্বাচিত হয়ে শপথ নিয়ে এলাকায় এসেছি। বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমার সময় জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে সুপারিশ করা হবে।

এফএ/জিকেএস