যশোরে খেজুর গুড়ের মেলা
যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে খেজুর গুড়ের মেলা। গাছি ও ভোক্তাকে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে তিনদিনের এ মেলা।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে গুড় মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার।
বহু বছর ধরে যশোরের সুনামের সঙ্গে মিশে আছে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য। প্রচলিত আছে, ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’। যশোরের খেজুর রস-গুড়ের ঐতিহ্য কয়েকশ বছরের। সুনাম রয়েছে দেশ-বিদেশেও। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে এ ঐতিহ্য। তাই খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রেখে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তানিচুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস, চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নুর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী প্রমুখ।
গুড় মেলায় চৌগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার একটি করে স্টল বরাদ্দ রাখা হয়। মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের পিঠার দুটি স্টল দেন। স্কাউটসের সদস্যরা মেলায় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রির ব্যবস্থা করেন।
মেলায় অংশগ্রহণকারী উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর-চাকলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তিনি ১২০ কেজি গুড় নিয়ে এসেছিলেন। ৪০০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করেছেন।
পাতিবিলা ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের গাছি জামাত আলী বলেন, ‘আমি ৬০ বছর ধরে গাছ কাটি (রস সংগ্রহ করি)। রস-গুড় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। আমরা মারা গেলে ছেলেপেলে (সন্তান) কেউ গাছ কাটবে না। এটা অনেক কষ্টের কাজ। এ যুগের ছেলেরা শিখতে চায় না।’
মেলায় অংশ নেওয়া সিংহঝুলি ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের গাছি আনিছুর রহমান বলেন, ‘খেজুর গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু খেজুর গুড় হতে পারতো চিনির বিকল্প খাদ্য। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। প্রত্যেকেই যদি খেজুর গাজ লাগায় (রোপণ করা), তাহলে সবার বাড়ি বাড়ি গুড় হবে। চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুর গুড় ব্যবহার করতে পারবো।’
মেলায় আসা দর্শনার্থী আজিজুর রহমান বলেন, দুই বছর ধরে চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা হচ্ছে। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। খেজুর রস ও গুড়ভিত্তিক অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম সচেতন হচ্ছে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, খেজুর গুড়ের শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা গাছিদের পাশে আছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, যশোরের খেজুর রস-গুড় আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। এ ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করার জন্য উপজেলা প্রশাসন গুড় মেলার আয়োজন করেছে।
মিলন রহমান/এসআর/এএসএম