বান্দরবানে পর্যটক পরিবহনে ফিটনেসবিহীন গাড়ি
প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম পছন্দের জেলা বান্দরবান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই অপার লীলাভূমিতে ভ্রমণ করতে প্রতিনিয়ত ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। তবে ভ্রমণে আসা এসব পর্যটকদের পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফিটনেমবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন যানবাহন। এমনকি রেলিং ও বসার সিট সংযোজন করা পণ্যবাহী মিনিট্রাকও ব্যবহার হচ্ছে পর্যটক পরিবহনে। ‘চাঁদের গাড়ি’ নামে খ্যাত এসব গাড়ি মূলত পণ্য পরিবহনের জন্যই তৈরি।
জানা যায়, বান্দরবান সদরে জিপ-মাইক্রোবাস মালিক সমিতিতে সাড়ে ৩শো, রুমায় ৫০, থানচিতে ৩০, রোয়াংছড়িতে ৬, আলীকদমে ৪৩, লামায় ১০০, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৪২টিসহ ৭ উপজেলায় মোট ৬২১টিরও বেশি গাড়ি পর্যটক পরিবহনে নিযুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মাহিন্দ্র গাড়ির নেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর। পক্ষান্তরে v-70 গাড়িগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিলামে ক্রয়কৃত হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস টিফিকেট নেওয়ার সুযোগ নেই। v-70 গাড়িগুলো তুলনামূলক শক্তিশালি হওয়ায় বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজন করে পাহাড়ে চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
বান্দরবান মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাছিরুল আলম জানান, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সমিতিতে বি-সেভেন্টি গাড়ি ২০টি, মহিন্দ্র-৩০০টি, ল্যান্ডক্রুজার-ফাইভডোর-৩০টিসহ মোট ৩৫০টি গাড়ি পর্যটক পরিবহন ব্যবসায় নিয়োজিত আছে।
রুমা উপজেলার জিপ মালিক সমিতির সভাপতি সম্পাদক মো. দস্তগীর হোসেন বলেন, তাদের সমতির অন্তর্ভুক্ত ৫০টি গাড়ি পর্যটক পরিবহনে নিযুক্ত রয়েছে। যার মধ্যে ৩০টি v-70 রয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও ওই গাড়িগুলোর কাগজপত্র বা গাড়ির ফিটনেস টিফিকেট নেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া দূর্গম এলাকা হওয়ায় দক্ষ চালক হলেও অধিকাংশ চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স।
চকরিয়া-লামা জিপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, তাদের মালিক সমিতিতে ১০০টি জিপগাড়ি, ভি-সেভেন্টি ৬০টি ও মাইক্রোবাস-১০টি রয়েছে। জিপ ও ভি-সেভেন্টি গাড়িগুলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিলামের মাধ্যমে সংগ্রহ করে কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন করে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র আপডেট নেই শুধু লট নম্বর দিয়েই চালানো হচ্ছে এসব গাড়ি।
আলীকদম টুরিস্ট যানবাহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাদের সমিতিতে চাঁদের গাড়ি রয়েছে ৪৩টি।
বান্দরবান মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপ মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাছিরুল আলম জানান, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সমিতিতে ভি-সেভেন্টি গাড়ি ২০টি, মাহিন্দ্র-৩০০টি, ল্যান্ডক্রুজার-ফাইভডোর-৩০টিসহ মোট ৩৫০টি গাড়ি পর্যটক পরিবহনে নিয়োজিত আছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বান্দরবানের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) আনোয়ার হোসেন জানান, পণ্যবাহী গাড়িতে কোনো প্রকার সংযোজন বা রূপ পরিবর্তন করে যাত্রী পরিবহনের নিয়ম নেই। জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়। তবে গত এক বছরে কতটি গাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
ট্রাফিক পরিদর্শক মো. এমদাদুল হক জানান, পাহাড়ে যাতায়াতে ব্যবহার করা গাড়িগুলো সমতলের তুলনায় শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। তবুও ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে সারাবছরই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গত ২০ জানুয়ারি কেওক্রাডং ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে দার্জিলিং পাড়ার কাছাকাছি এলাকায় একটি v-70 গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে দুই নারী পর্যটক ঘটনাস্থলে নিহত ও ১১ জন আহত হন।
এফএ/জিকেএস