ইউটিউব দেখে চা বানিয়ে লাখ টাকা আয়
সুন্দর পরিপাটি করে লাল সবুজ রঙের বাশের বেড়া দিয়ে সাজানো ছোট্ট চায়ের দোকান। দূর-দূরান্ত থেকে চা প্রেমীরা এখানে ছুটে আসেন এক কাপ চায়ের স্বাদ নিতে। যে যার পছন্দমতো চায়ের অর্ডার দেন। মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের পাচখোলা এলাকার পাশে দেখা মেলে জমজমাট এই ‘চায়ের বাড়ি’ দোকানের।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দোকানে গিয়ে দেখা যায় দোকানের মালিক শাহরিয়ার মনির (৪০) বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী। উপজেলার ডা. মোজাম্মেল হক খান সড়কের কোলঘেষে গড়ে ওঠা প্রবীণ নিবাস ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশে অবস্থিত এ চায়ের দোকানে রয়েছে শতাধিক রকমের চায়ের আয়াজন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দুবাই চা।
বাহারি রকমের চা বানিয়ে মাসে বিক্রি হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। সেই লাভের টাকায় চলে নামে পরিচিত এই দোকানের মালিক একই এলাকার শাহরিয়ার মনির (৪০)।
দোকান মালিক শাহরিয়ার মনিরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরের পর থেকে চায়ের দোকানে বেচাকেনা শুরু হয়। দুবাই চা, সুলতান সুলেমান, ক্যারামেল, চাতলা, তেতুল, কমলা, আয়ুর্বেদিক রং চা, এনার্জি বুলেট চা, সাত লেয়ার চা, দই চা, কাজু বাদাম চাসহ আছে শতাধিক রকমামের চা। দোকানটি ইতিমধ্যে জেলায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। শতাধিক বাহারি চা থাকলেও সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দুবাই চা। যার মূল্য প্রতি কাপ ৫০ টাকা। মনিরের সব ধরনের চা মাটির কাপ বা ছোট হাড়িতে করে পরিবেশ করা হয়। যা দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়।
জানা যায়, ২০০০ সালে শাহরিয়ার মনির এসএসপি পাশ করার পর সংসারের হাল ধরতে ঢাকা যান। সেখানে একটি গার্মেন্টসের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। ২০ বছর চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হতো মনিরকে। বিমান বন্দরের পাশের একটি দোকানে দুবাই চা খেয়ে বেশ তৃপ্তি পান মনির। পরে গার্মেন্টেসের চাকরি ছেড়ে ২০২১ সালে মাদারীপুরের নিজ গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। ইউটিউব দেখে বাহারী রকমের চা বানানোর কৌশল শেখেন। পরে নিজেই তার বাড়ির সামনে চায়ের দোকান দেন।
প্রথমে দোকানে ১৫ রকমের চা বিক্রি শুরু করেন তিনি। দিন দিন ক্রেতাদের চাহিদা বাড়তে থাকে। বর্তমানে তার দোকানে ১১০ রকমের চা তৈরি হয়। চা প্রেমীরা তাদের পছন্দমতো চায়ের অর্ডার দিলে তিনি ও তার স্ত্রী মিলে বানিয়ে দেন চা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের চা পাওয়া যায় এখানে।
বিকেলের পর থেকেই চায়ের বাড়িতে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় ভিড় আরও বেড়ে যায়। দিন দিন চায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় ক্রেতাদের আনাগোনাও চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে হলেও যাতায়াতে রাস্তা ভালো থাকায় অনেকেই শখ করে যান চা খেতে। প্রতিদিন তার পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার চা বিক্রি হয়। গড়ে মাসে তার দেড় লাখ টাকা বেচাকেনা হয়। লাভের টাকায় চলে তিন ছেলে মেয়ের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খবর।
চা খেতে আসা স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন পাশে আছি মাদারীপুরের প্রতিষ্ঠাতা বাইজীদ মিয়া বলেন, মনিরের চায়ের দোকানের অনেক প্রশংসা শুনেছি। আমি প্রথম এখানে চা খেতে এসেছি। দুবাই চা খুব মজা। এরপর আমি আমার পরিবার নিয়ে এখানে চা খেতে আসবো।
শহরের থেকে আসা দুই বান্ধবী আফসান ও মিতু জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রায় এখানে বন্ধুদের সঙ্গে চা খেতে আসি। এখানের চা বেশ মজা। আমাদের ভালো লাগে, এজন্য প্রায়ই আসি।
দোকানদার শাহরিয়ার মনির জাগো নিউজকে বলেন, আমি ১১০ রকমের চা বানাই। তবে দুবাই চা বেশ জনপ্রিয়। প্রায় ৪০টি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় এই চা। আমার চা পান করতে অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন। প্রতিদিন আমার পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মতো চা বিক্রি হয়। তবে বিশেষ দিনগুলো সাত থেকে আট হাজারও বিক্রি হয়। এখন নিজ হাতে চা বানিয়ে আমি বেশ ভালো আছি। আমি অন্যদের চা খাইয়েও তৃপ্তি পাই।
উন্নয়ন সংস্থা দেশগ্রামের পরিচালক এবিএম বজলুর রহমান খান রুমি বলেন, মনির চা বিক্রি করে আয় করছেন। তা দেখে জেলার অনেক বেকার যুবকরাও এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসবেন। এতে করে অনেকের আত্মকর্মসংস্থানের যোগান হবে।
মাদারীপুরের পাঁচখোলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তিনু হাওলাদার বলেন, খুব অল্প সময়ে মনিরের চায়ের সুনাম ছড়িয়েছে। এখানে নানা ধরনের সুস্বাদু চা পাওয়া যায়। মনির চা বিক্রি করে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। যা গর্বের বিষয়।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এনআইবি/জেআইএম