মৌমাছি আর মানুষে যেন বন্ধুত্ব
বাড়ির তিনতলার বারান্দায় ছোট-বড় অন্তত ১২টি চাক। চাক ঘিরে হাজার হাজার মৌমাছির বিচরণ। চারদিক শুধু ভোঁ ভোঁ শব্দ। মৌচাকের নিচেই বাড়ির সবাই চলাচল করছেন নির্ভয়ে। চলাফেরা করার সময় পরিবারের সদস্যদের মৌচাকে মাথা বা হাত লাগলেও মৌমাছিগুলো হুল ফোটায় না। চাকগুলো লম্বা ও বড় হয়ে এতই নিচে ঝুলে এসেছে যে বাড়ির মানুষকে মাথা নিচু করে চলাচল করতে হয়।
এমনই একটি বাড়ি দেখা গেলো জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের পাঁচগাছি গ্রামে। ওই গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের (হবু হাজি) বাড়ি এটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় চাকগুলো লম্বা হয়ে নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে। মৌচাকের মৌমাছিগুলো ভোঁ ভোঁ শব্দে উড়ে বেড়ালেও কাউকে হুল ফোটাচ্ছে না। এ যেন মৌমাছি আর মানুষের অন্যরকম ভালোবাসা। এমন দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন অনেকে।
মৌচাক দেখতে আসা রফিকুল আলম বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বাড়িতে মানুষ আর মৌমাছি একসঙ্গে বসবাস করছে শুনেছিলাম। আজ তা নিজ চোখে দেখলাম। সত্যিই এ এক অন্যরকম ভালোবাসা।’
বাড়ির মালিক উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বছরের পর বছর মাছিগুলো চাক বেঁধে আছে। এখন পর্যন্ত কাউকে কামড়ায়নি। অনেকে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য এসেছিলেন, আমি মধু সংগ্রহ করতে দেইনি। যেহেতু মৌমাছিগুলো আমার বাড়ি নিরাপদ মনে করে বাসা বেঁধেছে এবং এরা যেহেতু আমাদের কোনো ক্ষতি করে না, সে কারণে মৌমাছিগুলোকে আমরা পরিবারের সদস্যের মতোই মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘আগে মাত্র ছোট দুটি চাক ছিল বারান্দার দরজার কাছে। পরে আরও মাছি এসে অনেকগুলো চাক বেঁধে কয়েক বছর থেকে বাস করছে। চাক বাঁধার পর থেকে বারান্দায় চলাফেরা, কাপড় শুকানো ও রান্নাবান্নার কাজ করা হয়। এসময় চাকে হাত লাগলেও মৌমাছিগুলো কামড় দেয় না।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিয়ায কাযমির বলেন, মৌমাছিগুলো যেখানে নিরাপত্তা, বাঁচার পরিবেশ ও খাবারের সুব্যবস্থা পায় সেখানেই তারা বাসা বাঁধে। মৌমাছিকে বিরক্ত বা আঘাত করলে আত্মরক্ষার্থে তারা হুল ফোটায়।
তিনি বলেন, মৌমাছি মানুষ বা গরু-ছাগলকে অতিরিক্ত হুল ফোটালে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মৌমাছি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা ভালো।
এসআর/এমএস