ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কোলঘেঁষে মাটি কর্তন, হুমকির মুখে গোমতীর বেইলি সেতু

জাহিদ পাটোয়ারী | প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২৪

‘কুমিল্লার দুঃখ’ বলা হয় গোমতী নদীকে। সেই নদীর ভাঙন রুখতে বাঁধ দেওয়া হলেও এখন সেটা হুমকির মুখে। মাটিখেকোদের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও একটি বেইলি সেতু। বাঁধের ওপরের পাকা সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সরেজমিন দেখা যায়, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁনপুর এলাকায় গোমতী নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতুর দুই পাশে গা ঘেঁষে মাটি কাটা। এসব মাটি ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এতে যেকোনো সময়ে ধসে পড়তে পারে বেইলি সেতুটি। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে শত শত যানবাহন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গোমতী থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় না। চলতি বছর বেইলি সেতুর গা ঘেঁষে যেভাবে মাটি কাটা হয়েছে তাতে উজান থেকে (ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য) পাহাড়ি ঢলে নদীতে পানি বাড়লে যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে সেতুটি। এতে নদীর এপারের সঙ্গে ওপারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

jagonews24

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে, ষাটের দশকে কুমিল্লা শহর ও আশপাশের উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা রক্ষার জন্য গোমতী নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। গোমতী নদীর বাম বাঁধের দৈর্ঘ্য ৭৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার ও ডান বাঁধের দৈর্ঘ্য ৬৫ কিলোমিটার। বাঁধের ওপরে পাকা সড়ক। এ বাঁধের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। নদীর দুই কূলের বাঁধের অন্তত ৩০টি স্থানে পাড় কাটা আছে ট্রাক্টর ওঠানামার জন্য। এতে বাঁধ ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে পড়েছে।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলি ইউনিয়নের বানাসুয়া এলাকায় নদীর পাড় ও চরের ফসলি জমি থেকে ট্রাক্টর নিয়ে অবাধে মাটি কাটতে দেখা গেছে। একই উপজেলার আমতলি পালপাড়া বড়বাড়ি, দুর্গাপুর, আড়াইওড়া, ছত্রখিল, বুড়িচং উপজেলার বাবুবাজার, শিমাইলখাড়া, গোবিন্দপুর এলাকাজুড়ে চলছে অবাধে মাটি কাটা।

পাউবো কুমিল্লার পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মাটি কাটা বন্ধে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা যেভাবে মাটি কেটেছে তাতে বেইলি সেতুটি ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে আমাদের নিজস্ব কোনো জনবল বা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না থাকায় এদের বিরুদ্ধে সরাসরি শক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। এরপরও প্রশাসনের সহায়তায় এরইমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বেশ কয়েকজনকে সাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

jagonews24

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসন অবগত রয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। বেইলি সেতু এলাকার পাড় কেটে যারা মাটি নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোমতীর মাটি কাটার বিষয়ে বহুবার আমাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এতে কোনো কাজ হয়নি। প্রশাসন চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাটি কাটা বন্ধ করতে পারে। মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। আগে ব্যবস্থা নিলে এখন বেইলি সেতু আর ঝুঁকিতে পড়তো না।

জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/জিকেএস