ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবাধে চলছে অবৈধ যান
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন অবৈধ যান। যার ফলে মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাংবাদিক ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মহাসড়কে চলছে নিষিদ্ধ সিএনজি। এছাড়া আঞ্চলিক সড়কেও চলছে সরকারের নিষিদ্ধ বিভিন্ন যানবাহন। সরকারের দেওয়া বিধি নিষেধ না মেনেই দিনে ও রাতে অবাধে মহাসড়কে চলছে এসব যান।
হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে এসব যান চলাচল করলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে মহাসড়কে অবাধে সিএনজি চলতে দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। এমন অভিযোগ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কে যাতায়াতকারী চালক ও সাধারণ যাত্রীদের। নিষেধাজ্ঞাকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিনই চলছে মহাসড়কে এসব অবৈধ যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পৌর শহরের জগন্নাথপুর এলাকার সঙ্গে নরসিংদী জেলার মাহমুদাবাদ এলাকার সংযোগ ব্রহ্মপুত্র সেতুর মাহমুদাবাদ চেকপোস্টের সামনে দিয়ে অবাধে চলছে সিএনজি। পুলিশ আটক করলে দিচ্ছে নানান অযুহাত। আবার বলছে কিছু সাংবাদিক ও বিশেষ ব্যক্তিদের নামও। কেউ বলছে রোগী নিয়ে এসেছি, কেউ বলছে ভৈরবে সিএনজি পাম্পে গ্যাস নিতে এসেছেন। গাড়িগুলো এমনভাবে চলাচল করছে, দেখলে মনে হয় না গাড়িগুলোকে বাধা দেওয়ার কেউ রয়েছে। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের চেকপোস্টের সামনে দিয়েই ২০ মিনিটে অন্তত ১০-১৫টি সিএনজিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ যান নির্বিঘ্নে চলতে দেখা যায়। বেশিরভাগ সিএনজি অটোরিকশার কোনো নম্বর প্লেটও নেই।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিএনজি চালক সুমন ও শরিফ বলেন, মহাসড়কটিতে তারা দিনে ও রাতে অবাধেই সিএনজি চালাচ্ছেন। কতিপয় সাংবাদিক ও পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছে সিএনজি। কোথাও পুলিশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কেউ তাদেরকে বাধা দেয় না। যদি পুলিশ কখনো আটক করেও তাহলে ১৫শো থেকে ৩ হাজার টাকা দিলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
আরেক চালক কামাল মিয়া জানান, সিএনজি চলাচল নিয়ে নরসিংদী-ঢাকা মহাসড়কে কিছুদিন আগে পুলিশের সঙ্গে হট্টগোল করে বিক্ষোভ মিছিল করে সিএনজি চালকরা।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গোপনে আঁতাত করেই মহাসড়কে নিষিদ্ধ সিএনজিগুলো চলাচল করছে। অবাধে নিষিদ্ধ সিএনজি চলাচলের ফলে মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এসব তদারকির জন্য নিয়মিত অভিযান চালানোর কথা থাকলেও হাইওয়ে পুলিশ কখনই তা করে না বলে দাবি স্থানীয়দের।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কর্তব্যরত ভৈরব হাইওয়ে পুলিশের এসআই শফর আলী বলেন, মহাসড়কে সিএনজি চলছে, তবে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছুটা উচ্চবাচ্য করে বিষয়টি এড়িয়ে যান পুলিশের ওই কর্মকর্তা ।
এ বিষয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাজু মিঞা জানান, নরসিংদীর ইটাখলা, ভৈরব ও বাজিতপুরের পিরিজপুর পর্যন্ত আমাদের ভৈরব হাইওয়ে থানার সীমানা। আঞ্চলিক সড়কে সকল ধরনের যান চলাচল করলেও মহাসড়কে কোনো প্রকার সিএনজি, অটোরিকশা চলতে দেওয়া হয় না। মহাসড়কে কেউ যদি আইন অমান্য করে সিএনজিসহ সরকারের নিষিদ্ধ যান চালায় তাহলে সেইসব গাড়ি আটক চালকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী মামলা ও আর্থিক জরিমানা আদায় করে থাকি। অবৈধ পরিবহন চলাচলে যদি প্রশাসনের কোনো লোক সহযোগিতা করে থাকে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। আমি সদ্য যোগদান করেছি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তথ্যমতে ২০১৬ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সিএনজি চলাচল কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারো অবাধে চলছে এই নিষিদ্ধ যান। অপরদিকে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কে বন্ধই হয়নি নিষিদ্ধ যান চলাচল।
এফএ/জেআইএম