স্বজন-বন্ধুদের কাছে ধারের টাকা তুলতে হালখাতা
স্বজনদের কাছ থেকে ধারের টাকা তুলতে আয়োজন করেছেন হালখাতার। গ্রাম বাংলায় দোকান কিংবা ব্যবসার বাকি টাকা তুলতে রীতি অনুযায়ী হালখাতার আয়োজন করা হয়। তবে ধার দিয়ে সময় মতো টাকা তুলতে না পেরে ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছেন কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারির ঝাড় এলাকায় শিক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল। স্বজনদের কাছে ধারের টাকা তুলতে তিনি নিজেই পৌঁছে দিয়েছেন হালখাতার চিঠি। এমন কাণ্ড দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার আন্ধারির ঝাড়ে একটি দোকানে এ হালখাতার অনুষ্ঠান করেন শিক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল।
জানা গেছে, আন্ধারীঝাড় এলাকার সিঙ্গাড়া হটস্পট নামের একটি দোকানে হালখাতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন শিক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল। হালখাতা উপলক্ষে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয় দোকানটি। ক্যাশ বাক্সের সামনে সাঁটানো হয় শুভ হালখাতার ব্যানার। পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল চেয়ার টেবিল। ধারের টাকা পরিশোধে আসা ব্যক্তিদের জন্য ছিল বিরিয়ানির প্যাকেট। কেউ খেয়ে গেছেন আবার কেউ নিয়ে গেছেন। টাকা পরিশোধের পর হালখাতার বই থেকে নামও কাটা হয় পরিশোধকারীদের।
এই হালখাতায় আমন্ত্রিত ছিলেন শিক্ষক আব্দুল আউয়ালের বন্ধু-বান্ধব, যারা তার কাছ থেকে টাকা ধার করেছিলেন। ব্যতিক্রমী এ হালখাতার অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করে উৎসুক জনতা।
হালখাতায় টাকা পরিশোধকারী মো. সোলাইমান ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক আউয়ালের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় সে আমার বাড়িতে হালখাতার চিঠি দেয়। প্রথমে আমি অবাক হয়েছিলাম। হালখাতার তারিখ অনুযায়ী আজ এখানে হালখাতা করলাম। বিরিয়ানি খেয়ে ধারের টাকা পরিশোধ করেছি।
আরেকজন মো. জব্বার মিয়া বলেন, সাড়ে ৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম কয়েক মাস আগে মেয়ের স্কুলে ভর্তির জন্য। আজ হালখাতায় পরিশোধ করলাম। বিষয়টা ভালো লেগেছে। এতে ঋণমুক্ত হলাম।
একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আনোয়ারুল হক জানান, আউয়াল মাস্টারের মন অনেক বড়। তিনি বন্ধু বান্ধবদের টাকা ধার দিয়ে আনন্দ পান। সেই টাকা তোলার জন্য আজ হালখাতার আয়োজন করেছেন। বিষয়টি নেগেটিভলি না নিয়ে পজিটিভলি নেওয়া দরকার। কারণ ধার নিয়ে মানুষ এখন দিতে চায় না। সেটা তোলার জন্য এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় আব্দুল আউয়ালকে ধন্যবাদ জানাই।
শিক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল জানান, দীর্ঘদিন ধরে ধারের টাকা না পেয়ে গত সপ্তাহে ৩৯ জন বন্ধু বান্ধবদের কাছে হালখাতার চিঠি পৌঁছে দিয়েছি। অনেকেই চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা পরিশোধ করেছেন। গতকাল ১৯ জন এসে হালখাতা করে টাকা পরিশোধ করেছেন। অনেকে আবার ঢাকায় থাকায় আসতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, একদিনের হালখাতার অনুষ্ঠানে সাড়ে তিন লাখের মধ্যে ১ লাখ টাকা তুলতে পেরেছি। আশা করছি বাকি টাকা দ্রুত পাবো।
আন্ধারীঝাড় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাবেদ আলী মন্ডল বলেন, ধার বা হাওলাত সমাজের একটি চিরাচরিত নিয়ম। মানুষ যতদিন থাকবে ততোদিন এই পন্থা থাকবে। বর্তমানে হাওলাত নেওয়া টাকা ফেরত না দেওয়া মানুষজনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আজ হাওলাতের টাকা তুলতে হালখাতা করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশে এর আগে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি অবাক করার মতো। ডিজিটাল সময়ে ডিজিটাল বিষয়। তবে হাওলাতের টাকা সময়মতো ফেরত দেওয়া উচিৎ।
ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এমএস