ঝিনাইদহ
ক্লাসে মিমিক্রি করে শিশুদের মন কেড়েছেন শিক্ষক নোমান
শিশুদের স্কুলগামী করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন ঝিনাইদহের ইসলামিক আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল নোমান। মটু-পাতলু কার্টুনের জনপ্রিয় চরিত্র মটু-পাতলুর কণ্ঠ নকল করাসহ মিমিক্রি করে শিশুদের আনন্দ দেন তিনি। এজন্য স্কুলের শিশুরা তার নাম দিয়েছেন ‘মটু-পাতলু স্যার’। মিমিক্রি করে দেশের বাইরেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নোমান।
নোমান ঝিনাইদহ শহরের আকরামুল হক ও নাসরিন নাহার দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড়। মালয়েশিয়ার কুয়লালামপুর ইউনিভার্সিটি অব আর্টস থেকে ডিপ্লোমা করে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
সম্প্রতি ঝিনাইদহ ইসলামিক আইডিয়াল স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল্লাহ আল নোমান ক্লাস নিচ্ছেন। আর বাচ্চারা মনোযোগ আর আনন্দ নিয়ে খেলার ছলে পড়া শিখছে। ক্লাসে বিভিন্ন জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রের কণ্ঠ হুবহু নকল করে বলে চলেছেন নোমান। বিনোদনের সঙ্গে চলছে পড়াশোনা। এতে আনন্দ পাচ্ছে কচি শিশুরা।
কথা হয় খুদে শিক্ষার্থী মেহজাবিন মুন ও তানিশার সঙ্গে। তারা বলে, ‘স্যার খুব ভালো। তিনি বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে বলতে আমাদের পড়ান। মটু-পাতলু, ইংরেজিতে ক্রিকেট ও ফুটবলের ধারাভাষ্য দিতে পারেন। আমরা শুনে অবাক হই। খুব ভালো লাগে আমাদের।’
আরেক শিক্ষার্থী সামি মাহাবুব বলে, ‘মটু-পাতলু স্যারের ক্লাস অনেক ভালো লাগে। তিনি মটু-পাতলুর মতো কথা বলেন। অনেক মজা করে ক্লাস নেন।’
অভিভাবক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমার বড় ছেলে এই স্কুলে পড়াশোনা করে। ছোট ছেলেকেও ভর্তি করাবো। এ প্রতিষ্ঠানের সবাই খুবই আন্তরিক। বাচ্চাদের সঙ্গে তারা অনেক মজা করে ক্লাস নেন। এজন্য বাচ্চারা ক্লাস মিস করতে চায় না।’
নোমানের স্ত্রী ও স্কুলশিক্ষিকা সুমাইয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক শিশু আছে যারা প্রথম অবস্থায় স্কুলে আসতে ভয় পায়, চায় না। তারা আমাদের এখানে এলে তাদের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করি। এতে বাচ্চারা স্কুলে আসতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।’
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ ইসলামিক আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল নোমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে শিশুরা মোবাইলফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাবা-মায়ের কথা শুনতে চায় না। পড়াশোনা করতে চায় না। এমনকি অনেকে স্কুলেও আসতে চায় না। সেই জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করছি বাচ্চাদের স্কুলমুখী করতে।’
তিনি বলেন, ‘মটু-পাতলু, মিনা কার্টুনের কথাগুলো ক্লাসে বললে শিশুরা অনেক খুশি হয়। অনেক বাচ্চারা বলে, টিভি-মোবাইলে যেগুলো দেখি-শুনি, সেগুলো স্কুলে এসেও স্যারের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি। বাচ্চাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্যই মূলত কাজটা করছি।’
প্রধান শিক্ষক নোমান বলেন, ‘অনেক অভিভাবক এসে বলেন, আগে বাচ্চারা স্কুলে আসতে চায়তো না, এখন স্কুলে না এলে ভালো লাগে না তাদের। আসলে এটা আমার দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফল। এজন্য বছরের পর বছর কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে।’
মটু-পাতলু, মিনা কার্টুন, ক্রিকেট-ফুটবলের ধারাভাষ্য, মান্না ও কুমার শানুর কণ্ঠেও কথা বলতে ও গান গাইতে পারেন শিক্ষক নোমান। মিমিক্রি করে ভারতেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন তিনি।
এসআর/জিকেএস