সংশয়ে ভোটাররা
‘নিজের খাইয়া খামাহা গ্যাঞ্জামের মধ্যে যামু না’
পটুয়াখালী জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি আসনে কাঙ্ক্ষিত ভোটার উপস্থিত না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এই দুটি আসনের মধ্যে পটুয়াখালী-১ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকায় এবং পটুয়াখালী-২ আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে।
পটুয়াখালী-১ (সদর, দুমকি, মির্জাগঞ্জ) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৭৩২৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩৮৪১৩ জন এবং নারী ভোটার ২৩৪৮৩৪ জন। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশ ভোটারেরই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে পটুয়াখালী শহরের কলেজ রোড, বনানী, ডিসি কোট এলাকা, ঝাউতলা, কলাতলা, ফায়রা সার্ভিসসহ বেশ কিছু এলাকায় পথচারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার বিষয়ে কথা হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
কেন ভোটকেন্দ্রে যাবেন না এমন প্রশ্নে তারা বেশ কিছু বিষয় সামনে এনেছেন। এর মধ্যে প্রথমতো, পটুয়াখালী-১ আসনে তাদের পছন্দের কোনো প্রার্থী না থাকা, নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষের কোনো লোকের তাদের কাছে ভোট চাইতে না যাওয়া, নির্বাচনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিজে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া এবং সর্বপরী নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
পটুয়াখালী-১ আসনে এবার মোট ছয় জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এরা হলেন- জাতীয় পার্টির কোচেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার (লাঙ্গল প্রতীক), বাংলাদেশ কংগ্রেস’র নাসির উদ্দিন তালুকদার (ডাব প্রতীক), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. খলিল ( ফুলের মালা প্রতীক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. নজরুল ইসলাম (আম প্রতীক), জাতীয় সমাজতান্তিক দল জাসদ এর কে এম অনোয়ারুজ্জামান মিয়া (মশাল প্রতীক), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মহিউদ্দিন মামুন (ছড়ি প্রতীক)।
তবে পটুয়াখালী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন তিনি। এরপরই মূলত নির্বাচন কেন্দ্রীক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছন্দ-পতন ঘটে।
পটুয়াখালী শহরের নিউ মার্কেটের মৎস্য ব্যবসায়ী কামরুল হাসান (২০) এবারেরনতুন ভোটার। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল, জীবনে প্রথম ভোট নৌকায় দেবো। কিন্তু যেহেতু পটুয়াখালী-১ আসনে নৌকার প্রার্থী নেই, সে কারণে আমি ভোটকেন্দ্রে যাবো না। তবে সংসদ নির্বাচনের পর পৌরসভা কিংবা উপজেলা নির্বাচনে যদি নৌকা মার্কার প্রার্থী থাকে তাহলে সেখানে আমি ভোট দেবো।’
নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী হারুন ফরাজী বলেন, ভোট কেন্দ্রে যামু না, এটা একদলীয় নির্বাচন। যাইয়া যদি কোনো ঝামেলায় পড়ি। আবার অনেকে কয় ভোট দেওয়া হইয়া গেছে, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। ভোট দেতে যাইয়া যদি একটা লাঠির বাড়ি খাই, নিজের খাইয়া খামাহা গ্যাঞ্জামের মধ্যে যামু না।
এদিকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে এরইমধ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, র্যাব, আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া দায়িত্বে থাকছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী জেলার চারটি সংসদীয় আসনে মোট ভোটোরের সংখ্যা ১৪ লাখ ৯ হাজার ৫৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন, নারী ভোটার ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩২২ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৬ জন। এবার চারটি সংসদীয় আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৫০৭টি। এতে মোট ৩২০৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চারটি সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, এনপিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, তৃনমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট এবং স্বতন্ত্রসহ মোট ২২ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এফএ/এমএস