ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঝালকাঠিতে নৌকা ছাড়া প্রচারণা নেই

মো. আতিকুর রহমান | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৪

নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসলেও ঝালকাঠিতে প্রচারণা জমে ওঠেনি। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন আমু ও শাহজাহান ওমরের প্রচারণাও কমে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আবার এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী যারা, তাদের কাউকেই তেমন চেনেন না অধিকাংশ ভোটাররা। তাই ঝালকাঠির দুটি আসনে নির্বাচনী উত্তাপ নেই বললেই চলে। যদিও মাঝে মধ্যে ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

সুগন্ধা, বিষখালী ও ধানসিঁড়ি নদীবেষ্টিত ঝালকাঠিতে রয়েছে দুটি সংসদীয় আসন। ঝালকাঠি-১ আসনটি রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নিয়ে এবং ঝালকাঠি-২ আসন সদর ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে গঠিত।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর (নৌকা), জাতীয় পার্টির এজাজুল হক (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির জসীম উদ্দিন তালুকদার (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মজিবর রহমান (ডাব), জাকের পার্টির আবু বক্কর সিদ্দিক (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মামুন সিকদার (ছড়ি), স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির (ঈগল) ও স্বতন্ত্র ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল ইসলাম (ট্রাক)।

এ আসনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ১২ হাজার ০৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭ হাজার ৮৬০ জন। নারী এক লাখ ৪ হাজার ১৪৫।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হয়। প্রথম সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-রাজাপুর নিয়ে গঠিত আসনে আমির হোসেন আমু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ এবং ২০০১ সালে অষ্টম সংসদে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ব্যরিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যমতের সরকারে যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আবার ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের (বীরউত্তম) কাছে হেরে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ২০০১ সাল পর্যন্ত আটটি সংসদ নির্বাচনে সাতবারই এ আসনে আওয়ামী লীগকে হারতে হয় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে। ২০০১ সালে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে প্রথমে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শাহজাহান ওমর।

দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বজললুল হক হারুন নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে। টানা তিনবার তিনি এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ২৯ নভেম্বর কারাগার থেকে বের হয়ে ৩০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকার মনোনয়ন পান শাহজাহান ওমর। পাল্টে যায় এ আসনের দৃশ্যপট। বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী যোগ দেন শাহজাহান ওমরের সঙ্গে। নামেন নৌকার নির্বাচনী প্রচারণায়। এ আসনে শাহজাহান ওমরের শক্ত প্রতিদ্বন্দী ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির। তিনিও প্রধানমন্ত্রী ও নৌকার প্রতি আস্থা রেখে গত ২৬ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর নির্বাচনী মাঠে একাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন শাহজাহন ওমর। তার আর শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অন্য যারা বিভিন্ন দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের এলাকায় পরিচিতি নেই বললেই চলে।

রাজাপুর সদর ইউনিয়নের বাইপাস মোড় এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে নৌকার শাহজাহান ওমর ছাড়া অন্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের কাউকেই চিনি না। এলাকায় তাদের কখনো দেখিনি। কোনো অনুষ্ঠানেও তারা আসেননি। এমনকি প্রার্থী হয়েও কোনো পোস্টার নেই তাদের। কোথায় মাইকিংও শোনা যাচ্ছে না। এমন প্রার্থী না থাকলেই ভালো হতো।’

অন্যদিকে ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাসির উদ্দিন এমরান (লাঙ্গল) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফোরকান হোসেন (আম)।

এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৪২ হাজার ১৫৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৭৩ হাজার ৯০০। নারী এক লাখ ৬৮ হাজার ২৫৪। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নলছিটিরি চেয়ে ঝালকাঠি সদরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সব সমময়ই ভালো ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমির হোসেন আমু টেকনোক্র্যাট কোটায় খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০০ সালে এ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে আমির হোসেন আমু এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে আমির হোসেন আমুই প্রথম পূর্ণমন্ত্রী। তিনি ছাড়া এ আসনে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো রাজনীতিবিদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাননি। আমু গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে টানা তিনবার এমপি হয়েছেন এ আসন থেকে। তাই ঝালকাঠি জেলা জুড়ে আমির হোসেন আমুর ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে।

আমির হোসেন আমুর শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই এ আসনে। জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দিন এমরান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফোরকান হোসেনকে চেনেন না ভোটাররা। নির্বাচনী মাঠে তাদের নেই কোনো পোস্টার। এমনকি তাদের কর্মী-সমর্থকরাও মিছিল, মিটিং কিংবা মাইকিংও করছেন না। বলা যায় ভোটের মাঠ পুরোটাই আমির হোসেন আমুর দখলে রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর কয়েকটি পথসভা করে ঢাকায় চলে যান আমু। এরপর থেকে তার নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নিরুত্তাপ এ আসনের নির্বাচনও।

ঝালকাঠির নলছিটি শহরের থানা সড়কের বাসিন্দা ইদ্রিস হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘নলছিটিতে নির্বাচনের কোনো খবর নেই। মাঝে মধ্যে নৌকার মাইকিং শোনা গেলেও অন্য দলের কোনো প্রার্থীকে আমরা চিনি না। তাদের চেহারাও দেখিনি। এরা শুধু নামেই প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে আমির হোসেন আমুর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মতো নির্বাচন হবে।’

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার মো. শাহ আলম বলেন, আমরা নির্বাচনী মাঠ গরম রেখেছি। ঝালকাঠি-২ আসনে আমির হোসেন আমুর পক্ষে প্রতিদিন মাইকিং ও সভা-সমাবেশ হচ্ছে। আশা করি আমির হোসেন আমুর বিজয় সুনিশ্চিত।

আতিকুর রহমান/এনআইবি/এমএস/এসআর