ভাষাসৈনিকের নামে মঞ্চ ভেঙে নির্মিত হলো পাবলিক টয়লেট
৭০ এর দশকে পাবনার ঈশ্বরদী পুরাতন বাস টার্মিনালে রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় নির্মাণ করা হয় মুক্ত মঞ্চ। নামকরণ করা হয় ‘ভাষা সৈনিক মাহবুব আহমেদ খান স্মৃতি মঞ্চ’। মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এ মঞ্চ। পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান এ মুক্ত মঞ্চেই অনুষ্ঠিত হতো। এজন্য ঈশ্বরদীর মানুষের আবেগ, অনুভূতি, পুরানো স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এ মঞ্চকে ঘিরে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ শাহ সূফির নেতৃত্বে এ মঞ্চসহ আশপাশের বেশকয়েকটি দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মঞ্চ না ভাঙ্গার অনুরোধ জানালেও তা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভাষা সৈনিকের নামে নির্মিত মঞ্চের স্থানে আধুনিক পাবলিক নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সেই আধুনিক পাবলিক টয়লের উদ্বোধন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসিম কুমার তালুকদার। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদসহ রেলওয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে অনুষ্ঠানে ঈশ্বরদীর কোনো জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভাষা সৈনিক মাহবুব আহমেদ খানের নামে নির্মিত মুক্ত মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা ঝড় ওঠে। পরের দিন ৯ ফেব্রুয়ারি মঞ্চ ভাঙ্গার প্রতিবাদে ঈশ্বরদীর সচেতন যুবসমাজের ব্যানারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে বক্তারা দ্রুত মঞ্চ নির্মাণ করার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও মঞ্চ পুণঃনির্মাণের দাবি জানান। এতে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেননি। বরং ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষা সৈনিকের নামে তৈরি মঞ্চের স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এতে আরও বেশি ক্ষুদ্ধ হন সকল স্তরের মানুষ। তারা তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.ত.ম শহিদুজ্জামান নাসিম বলেন, ভাষা সৈনিকের নামে নির্মিত মঞ্চ ভেঙ্গে সেখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন দেশে এ ধরনের একটি ন্যাক্কারজনক কাজ দেখতে হবে তা ভাবতে পারিনি। এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ না করে আশেপাশে রেলের অসংখ্য পরিত্যক্ত জায়গা ছিল সেখানে টয়লেট নির্মাণ করতে পারতো। এ মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলার পর আমি নিজেও রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ না করে ৫০ গজ দূরে অথবা আশপাশের রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা কোন কর্ণপাত করেনি। এটি আমাদের ঈশ্বরদীবাসীর জন্য কলঙ্ক ও দুঃখের বিষয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি নায়েব আলী বিশ্বাস বলেন, এ মঞ্চের সঙ্গে এখানকার রাজনীতির নানান স্মৃতি জড়িয়ে আছে। দলীয় জনসভার পাশাপাশি এখানে সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান হয়। এ মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আরও বেশি কষ্ট পেয়েছি এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কথা শুনে। এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ও রাজনৈতিক নেতারা রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেনি।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনকে আধুনিকীকরণের জন্য রেলের পরিত্যক্ত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখানে একটি মঞ্চ ছিল সেটিও উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছিল ভেঙ্গে ফেলা মঞ্চের আশেপাশে একটি মঞ্চ নির্মাণ করা হবে। সেটির বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এখন আবার দাবি জানাচ্ছেন পুরাতন মঞ্চের আশপাশে মঞ্চ না করে খায়রুজ্জামান বাস টার্মিনাল রেলগেট এলাকায় একটি মঞ্চ নির্মাণের। সংসদ নির্বাচনের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে বলে আশা করছি।
শেখ মহসীন/এনআইবি/এমএস