ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মোংলা-খুলনা রেল প্রকল্প

কথা দিয়েও কথা রাখলো না রেল

আবু হোসাইন সুমন | মোংলা (বাগেরহাট) | প্রকাশিত: ১০:০৯ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৪

কথা ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে মোংলা-খুলনা রুটে যাত্রীবাহী রেল চলবে। সেই হিসেবে রেল চলাচলের সময়সূচিও ঠিক হয়। যশোর থেকে ফুলতলা হয়ে প্রতিদিন দুইবার মোংলায় যাতায়াত করবে যাত্রীবাহী রেল। তাই জোরেশোরে চলেছিল শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন যাত্রীরাও। দ্রুত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু বিধি বাম, কথা থাকলেও নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এই রুটে বাজবে না ট্রেনের হুইসেল। কবে নাগাদ ট্রেন চলবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

মোংলা-খুলনা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান রোববার (৩১ ডিসেম্বর) জানান, পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে না। কবে নাগাদ চলবে তার সঠিক দিনক্ষণও ঠিক হয়নি।

Rail-(1).jpg

ট্রেন না চলার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যথা সময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারায় এখনই ট্রেন চলছে না।

জানা গেছে, মোংলা বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সহজ করতে ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন হলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। রেলপথ, রেলসেতুসহ মূল রেল লিংকিংয়ের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের অক্টোবরে। ৯১ কিলোমিটার রেলপথের পাশাপাশি রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু, ১১টি প্লাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।

নির্মাণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত বছরের ১ নভেম্বর ভার্চুয়ালী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এই রেলপথ। অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চালুর। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই এই পথে রেল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

যশোর থেকে ফুলতলা হয়ে মোংলায় আসবে প্রতিদিন দুইটি ট্রেন। সহজ যোগাযোগ মাধ্যম হওয়ায় নতুন এই রেলপথ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন খুলনা, যশোর ও মোংলা অঞ্চলের যাত্রীরা।

মোংলা ইপিজেডে কাজ করেন খুলনা বয়রা এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল। তিনি বলেন, এই রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় ছিলাম। সকালে ট্রেনে ইপিজেড স্টেশনে নেমে কাজ শেষ করে আবারও ট্রেনে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখনতো অনিশ্চিতয়তার মুখে পড়লাম।

Rail-(1).jpg

তিনি আরও বলেন, শুধু আমি না, আমার মতো আরও অনেকে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর ও মোংলা ইপিজেডে কাজ করেন। আমাদের নানা দুর্ভোগে যাতায়াত করতে হয়।

মুরাদ হাওলাদার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, নতুন রেলপথ আমাদের এই অঞ্চলের যোগাযোগে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে। এতে আমরা দারুণ খুশি ছিলাম। যাত্রা শুরুর প্রথম দিনেই আমি এই রেলে উঠতে চেয়েছিলাম।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় সমিতির মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরুর বিষয়টি আমাদের জন্য দারুণ সুখবর ছিল। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছি এই পথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করছেন এই পথ দিয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য। এই রেলপথের মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। আর তাতে এ অঞ্চলের অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এদিকে রেল চলাচলের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, মূল রেল লিংকিং কাজ আমরা আগেই সম্পন্ন করেছি। এখন শেষ দিকের কিছু কাজ বাকি। যেগুলো আমরা বলছি ফিনিশিং কাজ। এখন টেলিকিমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়ের কিছু কাজ চলছে। যা দ্রুত শেষ হবে।

ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ রেলপথটি নির্মাণ করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি ও ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।

এফএ/এমএস