দুইশো বছরের ঐতিহ্য নবীনগরের পৌষ মেলায় মানুষের ঢল
শীতের আমেজকে আরও নান্দনিক করতে শেরপুরে হয়ে গেলো পৌষ মেলা। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) শেরপুর পৌর শহরের নবীনগর মহল্লার রোয়া বিলে প্রায় দুইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় নামে সব বয়সী মানুষের ঢল।
আয়োজকরা জানান, ডিজিটাল যুগে বাঙালিদের জীবনে গ্রামীণ কৃষ্টিকালচার ধরে রাখতেই এই আয়োজন। দর্শনার্থীর ভিড় বেশি থাকায় আগামীতে আরও বড় আয়োজনের প্রত্যাশা তাদের।
মেলার মূল আকর্ষণ ঘোড়দৌড় হলেও, সাইকেল রেস, গাঙ্গি খেলা ও নারীদের মিউজিক্যাল চেয়ারসহ গ্রামীণ বিভিন্ন খেলা ও প্রতিযোগিতা বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। এর কারণে আগের চেয়ে দর্শনার্থীর ভিড়ও বাড়ছে মেলা প্রাঙ্গণে। খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে মেলা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এই মেলা উপলক্ষে স্থানীয়রা জামাই ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসেন। দিনব্যাপী মেলা হলেও স্থানীয়দের মাঝে এর প্রস্তুতি চলে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই। মেলা ঘিরে শেরপুর শহরের নবীনগরসহ আশপাশের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বছরের এই সময়টাতে প্রতিটি বাড়িই মুখরিত হয় আত্মীয় স্বজনদের পদভারে। মূলত এই মেলাকে ঘিরেই সবার বাড়িতে পিঠা পুলির উৎসব চলে সপ্তাহজুড়ে।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় দুইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে নবীনগর এলাকায় এ মেলা হয়ে আসছে। পূর্বপুরুষদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তারাও। প্রতিবছর এই মেলাটি মূলত পৌষ সংক্রান্তিতে হলেও কয়েক বছর ধরে বোরো আবাদের জন্য সংক্রান্তির আগেই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে প্রতি বছরই পরিবারগুলোতে লাগে উৎসবের আমেজ।
মামুন আহমেদ বলেন, আমার শ্বশুরবাড়ি শেরপুরে। প্রতিবছর এই দিনে আমি এই মেলায় পরিবারসহ ঘুরতে আসি। এ মেলাটিতে অনেক মজা হয়। আমরা শুনেছি এ মেলা প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো।
সুমন সুহানুর বলেন, এ মেলা স্থানীয়দের কাছে ঈদের মতো। নবীনগরের এমন কোনো বাড়ি পাবেন না, যে বাড়িতে এই মেলার মুড়ি মুড়কি নেই।
ঝিনাইগাতী থেকে আসা হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি আমার বন্ধুদের নিমন্ত্রণে এই মেলায় প্রথমবারের মতো ঘুরতে এসেছি। মেলায় এসে শৈশবে হারিয়ে গেছি। গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয়দের এই উদ্যোগ দেখে খুব ভালো লাগছে।
প্রতিবারের মতো এবারো মেলায় বসে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী মুড়কি-মুড়ি, মোয়া, নিমকি, গজা, কলাই, বাদাম, কটকটি, তিলের খাজাসহ নানা মুখরোচক খাবারের দোকান। এছাড়া প্লাস্টিক ও মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা, নারীদের বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী এবং গৃহস্থালী পণ্যের পসরা সাজান দোকানিরা।
ব্যবসায়ী রমজান মিয়া বলেন, মেলায় বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি। আমরা এ মেলায় অল্প সময়ে ভালো বিক্রি করতে পারি, অনেক লোক এ মেলায় আসে। আমি গত বিশ বছর ধরে এ মেলায় দোকান দিই, এর আগে আমার বাবাও এই মেলায় দোকান নিয়ে আসতো।
এবারের মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় বেশি থাকায় আগামীতে আরও বড় আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আয়োজকরা।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পৌষমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাই বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই প্রতিবছর মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। পরের বছর কমিটি গঠন করে আরও বড় আকারে দুই দিনব্যাপী মেলা আয়োজন করবো।
এফএ/এমএস