ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বাবা-মার কোলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে ফ্রান্স থেকে ভোলায় ইব্রাহীম

জুয়েল সাহা বিকাশ | প্রকাশিত: ১১:৪৮ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

স্বপ্ন ছিল ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা অর্জন শেষে বড় চাকরি করে দাঁড়াবেন পরিবারের পাশে। ছেলের স্বপ্ন পূরণে পরিবারও তাকে ফ্রান্সে পাঠায়। কিন্তু মরণব্যাধী ক্যানসার নিঃশেষ করে দিয়েছে ভোলার চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ গ্রামের মো. ইব্রাহীমের সব স্বপ্ন। শেষ নিশ্বাস নিজের দেশে ত্যাগ করবেন বলে আবদার করলেও তাকে দেশে নিয়ে আসার মতো ছিল না কেউ। এমন সময় মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইব্রাহীমকে দেশে নিয়ে আসেন ফ্রান্সের চিকিৎসক ড. ম্যাথিউ জামেলট।

জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারীগঞ্জ গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন হাওলাদারের ছেলে মো. ইব্রাহীম। উচ্চশিক্ষার জন্য পরিবারের কাছে ফ্রান্সে যাওয়ার আবদার করেন তিনি। তার সেই আবদার পূরণ করতে পরিবার ধারদেনা করে ২০২২ সালের শুরুর দিকে ফ্রান্সে পাঠান তাকে। কিন্তু যাওয়ার মাত্র ৭ মাসের মধ্যেই ইব্রাহীম আক্রান্ত হন মরণব্যাধি ক্যানসারে। সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। কিন্তু কিছুতেই ইব্রাহীমকে ক্যানসার থেকে সুস্থ করা গেলো না। শেষ নিশ্বাস বাবা-মার কোলে ত্যাগ করবেন বলে আবদার করলে ইব্রাহীমকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ফ্রান্সের চিকিৎসক ড. ম্যাথিউ জামেলট।

মো. ইব্রাহীম জানান, অনেক স্বপ্ন নিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বেশ কয়েক মাস ক্লাসও করেছেন। কিন্তু ফ্রান্সে যাওয়ার ৫ মাস পর তার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে তিনি ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খান। কিন্তু কিছুতেই কমছিল না ব্যথা। পরে আরও দুই মাসের মাথায় টেস্টে ধরা পরে তার লিভারৎ ক্যানসার। এরপর তিনি ফ্রান্সের ড. ম্যাথিউ জামেলটের অধীনে প্রায় এক বছর চিকিৎসা নিয়েছেন।

কিন্তু কিছুতেই ভালো হচ্ছিল না। দিন দিন তার শরীরের অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকও তার হাল ছেড়ে দেন। চিকিৎসক তাকে সরাসরি বলেই দেন তিনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না। এমন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে তিনি সারাদিন তার গ্রামের বাড়ি, বাবা-মা এবং আত্মীয়-স্বজনদের কথা ভাবতেন।

এরপর তিনি ওই চিকিৎসকে বলেন শেষ নিশ্বাস তিনি তার বাবা-মার কোলে ত্যাগ করতে চান। কিন্তু তাকে দেশে নিয়ে আসার মতো ছিল না কেউ। পরে ওই চিকিৎসক তাকে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নিজে গত ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে দিয়ে যান। গত শুক্রবার তিনি গ্রামের বাড়ি হাজারীগঞ্জ বাবার বাড়িতে আসেন।

ফরাসি চিকিৎসক ড. ম্যাথিউ জামেলটের এমন কাজের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যতদিন বাঁচবেন তার জন্য দোয়া করবেন বলে জানান ইব্রাহীম।

ইব্রাহীমের সহপাঠী মো. মামুন বলেন, তিনি ইব্রাহীমের সঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই পড়াশুনা করেন। ইব্রাহীম যখন উচ্চশিক্ষার জন্য ফ্রান্সে যায় তখন আমরা বন্ধুরা সবাই অনেক খুশি হয়েছিলাম। ইব্রাহীমকে আমরা ১৫-২০ জন বন্ধু মিলে ঢাকায় এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়েছিলাম। সে ফ্রান্সে গিয়েও আমাদের ফোন দিতো। কিন্তু হঠাৎ করে ইব্রাহীমের ক্যানসার আক্রান্তের খবর শুনে আমাদের বন্ধুমহলে হতাশা নেমে এসেছে। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) ইব্রাহীম গ্রামের বাড়িতে আসার পর থেকে আমরা প্রতিদিনই সকাল বিকেল তাদের বাড়িতে যাচ্ছি। আর তাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছি।

ইব্রাহীমের বাবা মো. কাঞ্চন হাওলাদার ও বড় বোন লিলু বেগম জানান, ছেলের ইচ্ছা পূরণে এনজিও ও স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ধার-দেনা করে ইব্রাহীমকে ফ্রান্সে পাঠাই। আশা ছিল ইব্রাহীম বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে বড় চাকরি করে সব দেনা পরিশোধ করবে ও আমাদের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ইব্রাহীমকে আর বাঁচাতে পারবো না এটা ভেবেই আর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আর ধার-দেনা কীভাবে পরিশোধ করবো জানি না। যদি ফ্রান্স সরকার ও বাংলাদেশ সরকার আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

ভোলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ইব্রাহীমের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তবে ইব্রাহীমের পরিবার থেকে চিকিৎসার জন্য আবেদন করলে তারা সরকারিভাবে সহযোগিতা করবেন।

এফএ/এএসএম