মানিকগঞ্জে চমক দেখাতে পারেন তিন জাহিদ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের কাছে টানতে দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটাররাও প্রার্থীদের নিয়ে করছেন বিচার বিশ্লেষণ। তবে প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় তিন জাহিদ। এই তিন জাহিদই এবার নির্বাচনে চমক দেখাতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
এরা হলেন, মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নৌকা প্রতীকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৌশলগত কারণে মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই মাঠে নৌকার প্রার্থী নেই। এ আসনে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও গণফ্রন্টসহ মোট চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক রুবেলের শক্ত প্রতিপক্ষ তিনি।
নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। বিশেষ করে সাবেক দুই সংসদ সদস্য এ.এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় এবং আনোয়ারুল হক তাকে সমর্থন দেওয়ার পর শিবালয়, ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার অধিকাংশ নেতাকর্মী জাহিদের পক্ষে ভোট চাইছেন।
স্থানীয়রা জানান, জাতীয়পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক রুবেল এই আসনের বাসিন্দা নন। এমনকি আগে তার কোন পদচারণাও ছিলো না এই অঞ্চলে। একারণে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও হাতে গোনা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া তার পাশে কেউ নেই। মাঠেও তার নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা। এছাড়া জহিরুল হক রুবেল তার জন্মস্থান মানিকগঞ্জ-৩ (সদর) আসনেও প্রার্থী হয়েছেন।
অন্যদিকে, মানিকগঞ্জ-১ আসনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও, স্বতন্ত্র প্রার্থী একমাত্র জাহিদ। তাই তার সঙ্গেই লড়াই হবে জাতীয় পার্টির। এ ক্ষেত্রে জাহিদই সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জে পড়ার কথা স্বীকারও করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক রুবেল।
প্রতীক বরাদ্দের দিন সাংবাদিকদের তিনি জানান, আসনটি আমার জন্য নতুন হওয়ায় সেখানে কাজ না করায় কিছুটা চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। তবে যত কঠিনই হোক না কেন তা থেকে উত্তরণ হতে পারব। কারণ মাঠে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ আছেন। প্রশাসনও এবার নিরপেক্ষ থাকবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর, হরিরামপুর ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন) আসনে প্রার্থী রয়েছেন ১০ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তার সঙ্গে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট চার নেতা। তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু, তার আপন চাচাতো ভাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, সিংগাইর উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্চাসেবকলীগ নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল। এর মধ্যে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ আলোচনায় এগিয়ে। জাহিদ আহমেদ টুলুর সঙ্গে বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী থাকায় প্রচারণায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। স্থানীয়রা মনে করেন, এ আসনে অন্যান্য দলের প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা নৌকার সঙ্গে ট্রাকের হবে।
মমতাজ বেগম জানান, দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী মাঠ সরগরম। ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে। এটাই চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এক্ষেত্রে নৌকার কোন সমস্যা হবে না। দিন শেষে মানুষ নৌকাকেই বিজয়ী করবেন।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে (সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা) নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ আসনে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীসহ মোট ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গণফোরাম ও জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে।
মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে মোট ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলায় মোট ভোটার ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৮৩২ জন পুরুষ এবং ছয় লাখ ২৯ হাজার ৯৫১ জন মহিলা ভোটার রয়েছেন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ছয় জন। তিনটি আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ৫১৬টি।
বি.এম খোরশেদ/এনআইবি/জেআইএম