গণেশ চন্দ্রের এক পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা!
বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় যখন ক্রেতার মুখ বেজার, তখন ক্ষেত থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে খুশি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক গণেশ চন্দ্র রায়। নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীম পেঁয়াজ চাষ করেছেন তিনি। একেকটি পেঁয়াজের ওজন ২০০-২৫০ গ্রাম। সবচেয়ে ছোট পেঁয়াজের ওজন ১৫০ গ্রাম। এতে একেকটি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১১-২০ টাকা।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে কৃষক গণেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ১ নম্বর নশরতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের জগদিশ মেম্বারপাড়ার গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
জেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় উৎপাদিত গণেশ চন্দ্র রায়ের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আকার অনেক বড়। স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমানও অনেক উন্নত। লাল বা গাঢ় খয়েরি রঙের বড় আকারের এ পেঁয়াজ চাষে সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চলতি বছর ১৫০ কৃষককে এককেজি করে নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজসহ ড্যাপ, পটাশ সার, পলিথিন ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হয়। অন্যদের মতো ২১ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন এ পেঁয়াজ চাষ করেন গণেশ চন্দ্র। তার ক্ষেতে উৎপাদিত প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন কমপক্ষে ২০০-২৫০ গ্রাম। সবচেয়ে ছোটগুলোরও ওজন ১৫০ গ্রাম। তিনি প্রথমদিকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেন ১২০ টাকা কেজি। বড় সাইজের চারটি ও ছোট সাইজের ৬-৭টিতেই এককেজি হয়ে যায়।
বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় গণেশ চন্দ্র প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ টাকা। এতে তার একেকটি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১১ টাকা ৪৩ পয়সা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তার উৎপাদিত পেঁয়াজ দেখে অন্য চাষিরাও এ জাতের পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষক গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, নাসিক এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীম পেঁয়াজ চাষ করে আমি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। ২১ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৩-১৪ হাজার টাকা। অথচ এরইমধ্যে ৬০ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। ক্ষেতে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আছে তাতে আরও ৪০-৪৫ হাজার টাকা আসবে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ যাতে চুরি না হয় সেজন্য পেঁয়াজ ক্ষেতে পলিথিন, খড় ও বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি করে থাকছি। রাতে পাহারা দিতে হয়। বর্তমানে ৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি। মানুষ ক্ষেত থেকেই পেঁয়াজ ও পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক গরিব মানুষ এমনি পাতা নিয়ে যাচ্ছেন পেঁয়াজের পরিবর্তে রান্না করে খাওয়ার জন্য।
কৃষক গণেশ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী শমা বালা বলেন, স্বামীর সঙ্গে তিনিও দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। পেঁয়াজ গাছগুলোকে সন্তানের মতো যত্ন করেছেন। এখন ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি।
গ্রীষ্মকালীন এ পেঁয়াজ দেখতে আসা রানীরবন্দরের ফজলুর রহমান বলেন, ‘এত বড় পেঁয়াজ চাষ হতে আগে কখনো দেখিনি। তাই লোকমুখে শুনে দেখতে এসেছি। দুই কেজি কিনলাম।’
নশরতপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম জানান, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বাজারে যখন শীতকালীন পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকে, সেসময় নাসিক এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ মানুষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জুলাই-আগস্ট মাসে বীজ বপন করে ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়। ৯০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ সংগ্রহ করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, এ পেঁয়াজ এখনো পুরোপুরি পরিপক্ক হয়নি। পরিপক্ক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। অপরিপক্ক এসব পেঁয়াজের প্রতিটির গড় ওজন অন্তত ২০০ গ্রাম। তবে পরিপক হলে প্রতিটির ওজন ২৫০ গ্রাম ছাড়িয়ে যাবে।
এমদাদুল হক মিলন/এসআর/এএসএম