ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ছাত্রলীগ কর্মী জুয়েলের মায়ের আর্তনাদ

‘তোরা আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে রেখে আমাকে মেরে ফেলতি’

এম মাঈন উদ্দিন | প্রকাশিত: ০৪:০৪ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

‘আমার ছেলেকে যেভাবে মেরেছে, এভাবে কেউ কাউকে মারে না। পৃথিবীতে এত নিষ্ঠুরভাবে মারতে কেউ দেখেনি। প্রয়োজনে আমাকে মেরে শান্তিতে থাকতি, তারপরও আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতি। আমার ছেলেকে এভাবে কেন মারলি। আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমার ছেলেদের জোড়া কেন ভাঙলি?’

হারানো ছেলেকে নিয়ে এভাবেই বিলাপ করতে থাকেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী জিয়াউল হাসান জুয়েলের (২২) মা জোৎসনা আরা বেগম। জিয়াউল হাসান উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের হাদিমুছা এলাকার মো. আলমগীর হোসেনের ছেলে। বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাত দশটায় হাদিমুছা এলাকার রাজাপুর নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সরেজমিনে নিহত জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে মা জোৎসনা আরা বেগম ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করছেন। স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাও অঝোরে কাঁদছেন।

জোৎসনা আরা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে ছেলে বলে তাড়াতাড়াড়ি ভাত দাও, আমি এমপি প্রার্থী আসছে সেখানে যাবো। এসময় একজন ফোন দিয়েছে, ফোনের জন্য সব ভাত খেতেও পারেনি। বলে আম্মু গাড়ি চলে আসছে, চলে যাচ্ছি। বলে না খেয়ে চলে গেলো। আর বাড়ি আসলো না। রাতে খবর পাই আমার ছেলে আর নেই।’

মিরসরাই থানা পুলিশ সূত্রে ও নিহতের স্বজনরা জানান, জিয়াউল হাসান অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর বিদ্যালয়ে যাননি। কোনো পদ না থাকলেও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। আগামী কমিটিতে মিঠানালা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মাটি, ইট ও বালু সরবরাহের কাজ করতেন জিয়াউল হাসান। বুধবার রাতে মোটরসাইকেলে মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের শোডাউন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন জুয়েল। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় এলে পূর্ব শত্রুতার জেরে মিঠানালা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. ইউনূস, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ, ফারুক ও ইউনুসের বাবা আবুল বশর, শামসুদ্দিনসহ ১০-১২ জনের একটি দল তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সড়কের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত জিয়াউল হাসানের ছোট ভাই তাজমীর হাসান শুভ বলেন, কিছুদিন আগে মাদক বিক্রিতে নিষেধ করায় রিয়াদ আমার ভাইয়ের পা কেটে ছোটদের উপহার দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। বুধবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় আমার বড় ভাই জুয়েলের ওপর হামলা করে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া বুকে চুরিকাঘাত করে খুন করে। আমি খুনিদের উপযুক্ত বিচার চাই।

ছাত্রলীগ কর্মী জুয়েলের মায়ের আর্তনাদ

মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাসদু করিম রানা বলেন, জুয়েল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাহিম জালাল বলেন, বুধবার রাত ১১টার দিকে মৃত অবস্থায় এক যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। তার বাম পা হাঁটুর নিচে বিচ্ছিন্ন ছিল। আর বুকের বামপাশে গভীর ক্ষত ছিল। ধারণা করছি ফুসফুসে আঘাত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, মিঠানালা ইউনিয়নের হাদিমুসা এলাকার রাজাপুরের নতুন রাস্তার মাথা এলাকায় ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছে এমন খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ইউনুসকে প্রধান আসামি করে নিহতের বাবা আলমগীর বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এফএ/জেআইএম