নিষ্কাশনের পথ বন্ধ রেখে মাছ চাষ, পানির নিচে ২০০ একর জমি
পাঁচ বছর আগেও শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার জয়ালু বিলের ধানে স্বপ্ন বুনতেন অন্তত পাঁচ শতাধিক কৃষক। তবে বর্তমানে কৃষকদের স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকার দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির মাছের ঘের। বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া সেই ছোট খালটি বন্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে মাছের ঘের। এতে খরায় পানি সংকট আর বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নষ্ট হচ্ছে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের দিকশূল মৌজা, পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের জয়ালু এবং বড় নওগাঁ মৌজার মধ্যবর্তী জায়গায় অন্তত ২০০ একর ফসলি জমিতে বোরো ও আমন মৌসুমে উৎপাদন হয়ে থাকে প্রায় আট হাজার মণ ধান। এই বিলটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একটি ছোট খাল গিয়ে যোগ হয়েছে জয়ন্তী নদীর সঙ্গে। বিলে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য এই খালটিই ছিল একমাত্র পথ। তবে পাঁচ বছর ধরে এই খালটি বন্ধ করে দুটি অংশে মাছের ঘের নির্মাণ করে মাছ চাষ করে আসছেন মাহাবুব মিজি ও নাজির খান নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি।
আরও পড়ুন: ‘ঋণ নিয়ে আবাদ করেছি, এখন পথে বসার অবস্থা’
ভুক্তভোগী কৃষক খলিল বেপারী বলেন, আমাগো জমির পানি বাইর হওয়ার রাস্তায় ঘের কাইট্টা (কেটে) বান (বাঁধ) দিয়া রাখছে। এইজন্য আমরা কোনো ফসলাদি করতে পারতাছি না। পানি জইম্মা (জমে) সব ফসল তলাইয়া নষ্ট হইয়া যায়। পাঁচ বছর ধইরা বউ-বাচ্চা লইয়া না খাইয়া থাকি।
কৃষক মজিবুর রহমান বেপারী বলেন, পাঁচ বছর ধরে এই বিলের কয়েকটি জায়গায় বাঁধ নির্মাণের ফলে ফসল হচ্ছে না। এতে এই অঞ্চলের কৃষকরা খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের একটাই দাবি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য তারা যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেন।
মোহাম্মদ হানিফা মোল্লা নামের স্থানীয় এক কৃষক বলেন, জন্মের পর থিকা এইখান দিয়া খাল দেখছি। কয়েক বছর ধইরা এই খালের জায়গায় বান্ধ (বাঁধ) দিয়া মাছের প্রজেক্ট করছে মাহাবুব মিজি আর নাজির সাব। তখন বাধা দিলেও আমাগো কথা শুনে নাই তারা। রাইতে রাইতে মাটি কাটছে। এখন এই বান্ধের (বাঁধ) কারণে আউশ আমন ধান আর হয় না।
আরও পড়ুন: স্লুইস গেটের দরজায় ত্রুটি, কৃষকদের ক্ষোভ
সেন্টু হোসেন নামের ভুক্তভোগী এক কৃষক বলেন, আমাগো জমিতে এখন এক মাজা (কোমর) বৃষ্টির পানি। এই পানি নামার কোনো রাস্তা নাই। আমাগো সব ধান নষ্ট হইতাছে। সরকারের কাছে আমাগোর একটাই দাবি যেন এই পানি নামানোর ব্যবস্থা কইরা দেয়।
এ বিষয়ে ঘের মালিক মাহাবুব মিজির কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাজির খান নামের আরেক ঘের মালিক জাগো নিউজকে বলেন, ঘের নির্মাণের জায়গাটি রতন হাওলাদারের ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি। এটা কোনো সরকারি সম্পত্তি নয়। তবে এই জায়গাটি ঢালু হওয়ায় বিলের পানি নিষ্কাশন হতো এটা সত্য। পরবর্তীতে আমরা লিজ নিয়ে সেখানে ঘের কেটে মাছ চাষ করছি। তবে উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধে কৃষকদের কথা মাথায় রেখে পরবর্তীতে আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য ঘেরের বাঁধের নিচ দিয়ে পাইপ বসিয়ে দেই। গত মৌসুমে পাইপটি ভেঙে যাওয়ায় এই সমস্যার দেখা দিয়েছে। আমরা কিছুদিন পর পাইপটি ঠিক করে দিবো।
আরও পড়ুন: ‘ধারদেনায় চাষ করেছি, বৃষ্টিতে স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেছে’
এ বিষয়ে ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাছিবা খান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে অ্যাসিল্যান্ড ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন ও পাইপ বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে। আর যারা ঘের তৈরি করেছেন তারা দ্রুত ঘেরের পানি কমিয়ে ঘেরের পাশ দিয়ে আগের মতো নালা কেটে দিবেন বলে কথা হয়েছে।
বিধান মজুমদার অনি/জেএস/এএসএম