কক্সবাজার-১ আসন
নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হচ্ছেন জাফর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন টানা তিনবারের পরাজিত প্রার্থী ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ। কিন্তু তিনবার পরাজিত প্রার্থী হিসেবে এবারও ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কায় তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ করছে জাফর অনুসারী তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে চকরিয়া পৌরশহরের থানা রাস্তার মাথায় সিস্টেম চকরিয়া কমপ্লেক্স চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ছৈয়দ আলম কমিশনারের সভাপতিত্বে জাফর আলমের সমর্থনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, দায়িত্বশীল নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশে নারী-পুরুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্থান সংকুলান না হওয়ায় মানুষের স্রোত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পৌরশহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রকিব উর-রাজা, চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখেন।
আরও পড়ুন: কপাল পুড়লো জাফরের, ৩ আসনে বর্তমানদের ওপরেই ভরসা
অন্যদিকে, সোমবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চকরিয়া পৌরশহরের এক রেস্তোরায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জাফর আলম।
নৌকা প্রতীকে দলের প্রার্থী হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমদের নাম ঘোষণা করা হলেও আপনি কেন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জাফর আলম বলেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের খুব কাছাকাছি ছিলাম। এজন্য জনগণ এবারের নির্বাচনেও আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছেন। জনগণের ভালবাসা থেকে আমি কোনোদিন দূরে থাকতে চাই না। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে মাঠে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে দল প্রধান শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, দলে যদি কোনো সম্ভাবনাময় প্রার্থী থাকে, তারা যদি মনোনয়ন না পান, তাহলে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। আমি সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। কারণ এই আসনে যাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছে তিনি আগে তিনবার নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। দলের দুঃসময়ে কোনো নেতাকর্মীর পাশেও ছিলেন না। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের আগুন-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে রাজপথেও ছিলেন না। তাই দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে চকরিয়া-পেকুয়া-মাতামুহুরী উপজেলার আপামর জনগণ তার কাছ থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এবারও তার নিশ্চিত ভরাডুবি হবে জেনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সচেতন জনগণ আমার পক্ষেই আছেন। তারা আমাকে আবারও এমপি হিসেবে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসন উপহার দেবেন।
আরও পড়ুন: কুমিল্লার ১১ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন যারা
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে ৫০ হাজার ৮২৯ ভোট পান। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তিনি। পরে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার নৌকা মনোনয়ন পেয়ে ৭৪ হাজার ২৯৭ ভোট পান। সেবারও বিএনপির সালাহউদ্দিনের কাছে পরাজিত হন নৌকার সালাহ উদ্দিন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমদ কারাবন্দি থাকায় তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ বিএনপির টিকিটে ভোট করেন। সেবারও বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন পত্নী হাসিনা আহমদের কাছে ৩৫ হাজার ৪০১ ভোটে হেরে ‘হ্যাট্রিক’ পরাজয় বরণ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/জেএস/এএসএম