ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

৬ বছরে বসেছে মাত্র ৩ পিলার!

বি এম খোরশেদ | প্রকাশিত: ১১:০৭ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

‘হচ্ছে হবে’ করে কেটে গেছে ছয়টি বছর। প্রথম ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে কেটে পড়েছেন অনেক আগেই। পুনরায় টেন্ডারে কাজ পেয়েছে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারও এক বছর পার হচ্ছে। কিন্তু শেষ হচ্ছে না ৩৪ কোটি টাকার সেতুর নির্মাণকাজ।

ছয় বছরে নদীতে বসেছে মাত্র তিনটি পিলার। ফলে যাতায়াতে প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই পাড়ের হাজারও মানুষ।

বলা হচ্ছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর এলাকার ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কথা। দুই পাড়ের মানুষের জনদুর্ভোগ কমাতে ও ঢাকার কেরানীগঞ্জের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করতে ২০১৮ সালে ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপুর্ণ সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩১৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কাজ পায় নাভানা কনস্ট্রাকশন।

২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে দুই দফা সময় বাড়িয়েও সেতু নির্মাণ শেষ করতে পারেনি। একপর্যায়ে কাজ ফেলে রেখে কেটে পড়েন ঠিকাদার। পরে তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় দফায় সেতুটি নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি জান্নাত কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে ৩৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে চুক্তিবদ্ধ হয় এলজিইডি। তাদের কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু করেননি তারাও।

সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর দুই প্রান্তের অ্যাবাটমেন্ট ও উইং ওয়ালের কাজ শেষ হয়েছে। মাঝ নদীতে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি পিলার। প্রকল্প এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রডসহ বিভিন্ন মালামাল। রডে মরিচা ধরেছে। সেতুর নিচ দিয়ে নৌকাযোগে যাতায়াত করছেন দুই পাড়ের মানুষ। কাদাপানি মাড়িয়ে উঠতে হয় নৌকায়।

নৌকার মাঝি আব্দুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫০ বছর ধরে এখানে নৌকায় করে মানুষ পারাপার হয়। মানুষের যাতায়াতে অনেক কষ্ট। এসব ভালো লাগে না। আমি চাই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হোক।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর। তিনি বলেন, ‘রাত ৯টার পর নদীতে নৌকা পাওয়া যায় না। তখন খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দুই বছরের চুক্তি কিন্তু ছয় বছর হয়ে গেলো, তারপরও সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না। এতদিন পানির দোহাই দিয়েছে। এখন পানি শুকিয়ে গেলেও কাজ শুরু হচ্ছে না।’

চান্দহর বাজারের ব্যবসায়ী শেখ কামাল বলেন, ‘যখন সেতুটির কাজ শুরু হলো তখন সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম। মিষ্টি বিতরণ হয়েছে এলাকায়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেতুটি না হওয়ায় আমরা এখন হতাশ। পিলার দেখে দেখেই ছয় বছর পার করলাম।’

কথা হয় চান্দহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বাদলের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলে মানিকগঞ্জের মানুষ খুব অল্প সময়ে কেরানীগঞ্জ হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবেন। দুই পাড়ে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানকার মানুষ শুধু পিলার দেখতে পাচ্ছে। এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পালিয়েছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান এসেছে কিন্তু তারাও কাজ করছে না। উপজেলার মাসিক সম্বন্বয় সভায় বারবার বিষয়টি বলা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রধান প্রকৌশলী সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছি। এর চেয়ে বড় জায়গাতো আর নেই। আর কোথায় গেলে সেতুটি বাস্তবায়ন দেখতে পাবো জানা নেই।’

এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সেতুর কাজ শেষ না করায় নাভানা কনস্ট্রাকশনকে ছয় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। পুনরায় টেন্ডারে নতুন করে চুক্তি হয়েছে জান্নাত কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে। তারা কাজ শুরু করেছেন। তবে বর্ষার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। এখন পানি নেমে গেছে। আশা করি চলতি অর্থবছরে কাজের গতি বাড়বে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে।

এসআর/এএসএম