ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গাইবান্ধা

দুর্যোগে চরাঞ্চলের মানুষের ভরসা ‘কমিউনিটি ফুড ব্যাংক’

শামীম সরকার শাহীন | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৩

টাকা-পয়সার বালাই নেই ব্যাংকে। নেই কোনো সুরক্ষিত অবকাঠামো। এমনকি বেতনভুক্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীও নেই তাদের। তারপরও বন্যা-খরার মতো দুর্যোগে এ ব্যাংকই ঢাল হয়ে রক্ষা করছে গাইবান্ধার চর-দ্বীপের মানুষকে। ‘কমিউনিটি ফুড ব্যাংক’ নামে এমনই এক ব্যাংক গড়ে উঠেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চর গোবিন্দতে। দিন দিন গ্রামীণ মানুষের আস্থা বাড়ছে কমিউনিটি ফুড ব্যাংকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন চর গোবিন্দ গ্রামের কয়েকজন নারী। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন, এ এলাকার নারীরা ফুড ব্যাংকের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ওই নারীরা নিজ এলাকায় ফিরে এসে গ্রামের নারীদের নিয়ে ফুড ব্যাংক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা সভায় নারীদের পাশাপাশি অংশ নেন পুরুষরাও। তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে গড়ে ওঠে ‘কমিউনিটি ফুড ব্যাংক’। এ ফুড ব্যাংক গঠনে গ্রামীণ নারীদের নানা পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশন।

ফুড ব্যাংকের উদ্যোক্তারা জানান, ফুড ব্যাংকের সদস্যরা প্রতিদিন রান্নার সময় একমুঠ করে চাল আলাদা করে জমা রাখেন। মাস শেষে এসব চাল এনে জমা করেন ফুড ব্যাংকে। বন্যা-খরার মতো দুর্যোগে যখন তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, তখন তারা এ ফুড ব্যাংক থেকে বিনা লাভে চাল ধার নেন। অভাব চলে গেলে ধার নেওয়া চাল তারা আবার ফিরিয়ে দেন।

ফুড ব্যাংকের একজন সদস্য হামিদা বেগম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন রান্নার সময় এক মুঠ করে চাল আলাদা করে রাখি। মাস শেষে চালগুলো ফুড ব্যাংকে জমা দেই। আমাদের একজন সদস্য এসব জমা খাতায় টুকে রাখে। এভাবে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ব্যাংকটিকে চালিয়ে যাচ্ছি।’

ব্যাংকের আরেক সদস্য সামিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি বলেন, ‘ফুড ব্যাংক চালুর আগে বন্যা-খরার সময় খাবারের অভাবে পড়তে হতো। তখন মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে খাবার কিনতাম। ফুড ব্যাংক চালু হওয়ায় এখন নিজেদের জমানো চাল ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ধার নিতে পারছি। এতে আমরা অনেকটাই স্বাবলম্বী।’

ফুড ব্যাংকের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন ওই গ্রামের শাহিন মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফুড ব্যাংকের সাফল্য দেখে শুধু এ গ্রামের মানুষই না, আশপাশের গ্রামের মানুষও এ ব্যাংকের সদস্য হবার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।’

ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি পপি বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্যা বা খরার কারণে অভাব যখন আসে, তখন গ্রামের প্রায় সবারই একসঙ্গে অভাব আসে। কিন্তু ফুড ব্যাংক তৈরির পর থেকে আর খাবারের অভাবের কথা চিন্তা করতে হয় না।’

ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেফালি বেগম বলেন, ‘ব্যাংকটি চালানোর জন্য বেতনভুক্ত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। ব্যাংকের কাজ চালানো হয় আমাদেরই একজন সদস্যের বাড়িতে। তাই ব্যাংক চালাতে করতে হয় না বাড়তি কোনো খরচ।’

জলবাযু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গ্রামের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফুড ব্যাংকের এমন ধারণা অনুকরণীয় বলছেন স্থানীয় উন্নয়নকর্মীরাও।

এসকেএস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ফুড ব্যাংকের ধারণাটি শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। ধারণাটি দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।’

সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট গ্রামের মানুষের এ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রামের মানুষগুলোর সম্মিলিত এ প্রচেষ্টা আমি শুরু থেকেই খোঁজ-খবর রাখছি। বন্যা-খরা-নদীভাঙন প্রবণ এ ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এমন মহতী উদ্যোগে নেওয়া প্রয়োজন। এতে গ্রামীণ মানুষের অভাব-অনটন নিরসন হবে।’

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসাহাক আলী জাগো নিউজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাঘাটা উপজেলার নদীবেষ্টিত এলাকায় হঠাৎ করেই বন্যা বা খরার মতো দুর্যোগ দেখা দেয়। এমন দুর্যোগের সময় এ ফুড ব্যাংক এলাকার মানুষকে খাদ্যাভাবে পড়তে দেয় না, যা একটি ভালো উদ্যোগ।

এসআর/এএসএম