ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যা

‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেও বিচার পাবো না এটা দুঃখজনক’

শামীম সরকার শাহীন | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ১০:২১ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা ও শাহ মখদুম হলের সভাপতি খলিলুর রহমান মামুন হত্যাকাণ্ডের দশ বছর পার হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলা উচ্চ আদালতের বিচার কাজ স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। ফলে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিজ দলের নেতাকর্মী ও স্বজনরা।

নিহত খলিলুর রহমান মামুন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ডোমেরহাট গ্রামের মো. খায়রুজ্জামান সরকারের ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোকলোর বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর নিজ এলাকা রামজীবন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

ছাত্রলীগের এ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই-নিরস্ত্র) পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। চাকরিতে যোগ দিতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রশিক্ষণে যাওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগের এ নেতা।

হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন নিহতের বড় ভাই খালেদ রেজা বাবুল। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে এজাহার নামীয় ২২ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এরপর চার্জ গঠনের শুনানির জন্য মামলাটি প্রক্রিয়াধীন ছিল। এরই মধ্যে এ মামলার দুজন আসামি মারা গেছেন। কিন্তু ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি। ফলে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মামলার আসামিরা।

নিহত মামুনের পরিবার জানান, দীর্ঘ দশ বছরেও তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার পাননি। উল্টো মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন আসামিরা। এতে শঙ্কা আর ভয় নিয়ে এখনো বিচার পাওয়ার আশায় স্বজনরা। চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার কাজ শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে পরিবার।

জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারকাজ স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন তিন আসামি। তাদের রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতের রিভিশন পেন্ডিং আদেশ দেন বিচারক। ফলে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশের কারণে মামলাটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে আসামিদের করা রিট পিটিশনের বিরুদ্ধে আপিল করেন মামলার বাদী খালেদ রেজা। ২০১৯ সালে করা সেই আপিল শুনানি না হওয়ায় এখনো কোনো আদেশ দেননি উচ্চ আদালত। এতে সকল বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা সফরে আসেন। ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে নিহত মামুনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। নিহত মামুনের বাবা-মাকে ডেকে সান্ত্বনা দেন তিনি।

এছাড়া চলতি বছরের ৫ জুন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিহত ছাত্রলীগ নেতা মামুনের পরিবার সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচার শেষ করার আশ্বাস দেন।

মামলার বাদী ও নিহত মামুনের বড় ভাই মো. খালেদ রেজা বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভাই বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালেও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। তখন এলাকায় কেউ ছাত্রলীগ করার সাহস পেতো না। ২০০৯ সালের শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবির মুক্ত করার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আমার ভাই। ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে তিনি একবার গুরুতর আহতও হয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি টার্গেটে পরিণত হন। আর সেই কারণে আমার ভাইকে জীবন দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও ভাই হত্যার বিচার এখনো পাইনি।

নিহত মামুনের ছোট ভাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক খালিদ উর রহমান বাদল জাগো নিউজকে বলেন, ভাইকে নৃশংসভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এতদিনেও বিচার হয়নি। একজন ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। কিন্তু সরকার ক্ষমতায় থাকতেও বিচার পাবো না এটা দুঃখজনক।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ নেতা আরও বলেন, মামলাটি দ্রুত ত্বরান্বিত করতে আমার বাবা-মাসহ ৫ জুন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি দ্রুত মামলার বিচারকার্য শুরু হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাইবান্ধা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ প্রিন্স জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে রিভিশন পেন্ডিংয়ে আছে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টের স্টে অর্ডারের কারণে চার্জ হেয়ারিং শুনানি বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের রিভিশন কেস নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতের বিচার কাজ শুরু সম্ভব হচ্ছে না।

শামীম সরকার শাহীন/এসজে/এএসএম