বাড়ি ফেরার ঠিকানা নেই তাদের
তারা বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু ঠিকানা জানা নেই। প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায়ও তাদের ঠিকানা বা স্বজনদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমনই তিনজন প্রতিবন্ধী নারী রয়েছেন ঢাকা আহছানিয়া মিশন যশোরের শেল্টার হোমে। পরিবারের সন্ধান না পাওয়ায় জেলা প্রশাসন তাদেরকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এই তিন নারী হলেন, ৬৫ বছর বয়সের বাকপ্রতিবন্ধী এক বৃদ্ধা, ২৩ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী এক তরুণী এবং মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী শিমু (২৪)।
প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের তত্ত্বাবধানে এই তিন নারী এখন ঢাকা আহছানিয়া মিশন যশোরের শেল্টার হোমে রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী বাকপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধাকে গত বছর ২৯ আগস্ট (২০২২) বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করে বেনাপোল থানা পুলিশ জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের কাছে হস্তান্তর করে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি পরিচয়হীনভাবে শেল্টার হোমে রয়েছেন।
২৩ বছরের আরেক বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে বেনাপোল থানা পুলিশ ভবঘুরে অবস্থায় উদ্ধার করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের কাছে হস্তান্তর করে। এছাড়া শিমু (২৪) নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণীকে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার ফরিদপুরের একটি শেল্টার হোম থেকে নিজেদের জিম্মায় নেয়।
এরপর জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার এই তিন নারীকে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু তাদের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফলে এই তিন নারীকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার।
জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার যশোরের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার শাওলী সুলতানা জানান, পারিবারিক একত্রীকরণের জন্য তারা ওই তিন নারীর স্বজনদের সন্ধান করেছেন। কিন্তু কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এজন্য তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ তিন নারীর ঘটনা তদন্ত করে তিনটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। জেলা প্রশাসক বরবার প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও ইশারা ভাষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ৬৫ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধা বিবাহিত। তার সন্তান আছে। তার সই নিয়ে সম্পত্তি দখল করে তাকে অপরিচিত জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও ইশারা ভাষার মাধ্যমে আধো-আধো বোলে ২৩ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী জানিয়েছেন, তার নাম মীম অথবা জীম। তিনি অবিবাহিত। তারা চার ভাইবোন। তিনি বড়। বাবার নাম বাবু ও মায়ের নাম রুবিনা। কিন্তু ঠিকানা জানাতে পারেননি।
আরেক মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী শিমু (২৪) জানিয়েছেন, তার বাবার নাম বারেক। শিমু তার পরিবারের আর কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জানান, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই যশোর অফিসে তাদের আঙুলের ছাপ ও ছবি দিয়ে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে। জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারও তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের পরিচয় উদঘাটন কিংবা স্বজনদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এজন্য বৃদ্ধাকে সরকারি বা বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রম এবং বাকি দু’জনকে গাজীপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা জানান, জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই তিন নারীকে সরকারি বা বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রম এবং বাকি দু’জনকে গাজীপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন জানান, ওই তিন নারীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় তার পরিবার। এজন্য তাদেরকে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ঠিকানা বা পরিচয় উদঘাটন না হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। এজন্য বৃদ্ধাকে সরকারি বা বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রম এবং বাকি দু’জনকে গাজীপুরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এফএ/জিকেএস