মৌসুমেই হরতাল-অবরোধে পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা
দেশে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলো লোকে লোকারণ্য হওয়ার কথা। তাদের পেয়ে ব্যবসায়ীরাও উজ্জীবিত থাকেন। সেখানে রাজনীতির অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখে পড়েছে পর্যটন খাত।
গেলো মহাসমাবেশ, হরতাল আর তিনদিনের অবরোধ আতঙ্কে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত সাগর কন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় পর্যটক নেই বললেই চলে। ফলে লোকসান গুনছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার হোটেল সী-ক্রাউনের পরিচালক সৈয়দ মো. ফিরোজ জানান, তার ২০ জন কর্মচারী, বিদ্যুৎ বিল ও অন্য খরচসহ দৈনিক ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তার হোটেলে ৬৪টি রুম আছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে বৃহস্পতি-শুক্র-শনিবারের জন্য বুকিং হতো ৭০ শতাংশ রুম। কিন্তু শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশ, রোববার দেশব্যাপী হরতাল তারপর থেকে টানা তিনদিনের অবরোধে সব বুকিং বাতিল হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত যে বুকিং ছিল তাতে দেড় লাখ টাকার ওপরে আয় হতো। সেখানে এখন ৩০ হাজার টাকা হবে কিনা সন্দেহ। এর মধ্যে খরচ আছে ১ লাখ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মাথায় হোটেল বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
শুধু সী-ক্রাউন নয় মঙ্গলবার কুয়াকাটায় থাকা ১৮০টি হোটেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান অবস্থা এমনটা সবার।
হোটেল সমুদ্রবাড়ি রিসোর্টের পরিচালক নজরুল ইসলাম সজিব জানালেন, গত বছর অক্টোবর মাসের শেষের সপ্তাহে তার ৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে ২০টি রুম থেকে। আর বর্তমানে একই সময়ে তার দেড় লাখ টাকা খরচ উঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে হলে চাকরি হারাতে পারে অসংখ্য কর্মচারী।
১৯৯৮ সাল থেকে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে পথ চলা এ পর্যটনকেন্দ্রটি বিশ্বের কাছে পরিচিতি পায়। করোনাকালে মুখ থুবড়ে পরতে হয়েছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমিটি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এখানে সেবা দেয়া ১৬টি পেশার ব্যবসায়ীদের। পদ্মা সেতুর সুফল বইতে থাকায় প্রতিনিয়ত আসছে বিনিয়োগকারীরা। স্বপ্ন বুনছে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা উদ্যোক্তারা। তবে করোনার পর রাজনীতির অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আবার লোকসানের ঘানি টানতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, করোনাকালের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের মধ্যে বড় একটি শঙ্কা কাজ করছে। বর্তমান সপ্তাহ যেভাবে যাচ্ছে এভাবে একমাস চলতে থাকলে ছাঁটাইয়ের কবলে পড়তে পারে কর্মীরা। প্রায় ১৫০০ কর্মচারী কাজ হারাতে পারে। এটা আমাদের জন্য বড় সমস্যা বয়ে আনবে।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, আমরা মূলত ট্যুর অপারেটর ও ঢাকার বিভিন্ন এজেন্সির পাঠানো পর্যটকদের গাইড করে থাকি। চার দিন যাবত আমাদের প্রায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫০ জন গাইড বেকার সময় কাটাচ্ছে। এভাবে আরও কতদিন থাকতে হবে সেটাও অনিশ্চিত।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জাগো নিউজকে বলেন, দেশের পরিস্থিতির সঙ্গে কুয়াকাটার সার্বিক বিষয় সবসময় সম্পর্কিত। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে আমাদের পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। শুরুতেই বড় ধাক্কা লেগে গেলো পর্যটন খাতে। বর্তমানে পর্যটক শূন্যের কোঠায়। মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের একটি বিনিয়োগ নিয়ে বসেন। এখনতো তাদের মাথায় হাত। কুয়াকাটায় ১৬টি পেশায় সরাসরি পাঁচ হাজার লোক পর্যটন সেবায় জড়িত। এভাবে চলতে থাকলে একদিকে বেকারত্ব এবং সরকারের একটি বড় আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল এম এ মোতালেব শরীফ জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটকদের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পরিস্থিতি নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কুয়াকাটায় পর্যটক আসবে না। এ কারণে কুয়াকাটায় থাকা সব আবাসিক হোটেলগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এখন পর্যন্ত আমরা পরিবেশ পরিস্থিতি দেখছি পরবর্তীতে আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সিদ্ধান্ত নেবো।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এসজে/এএসএম