বাগেরহাট
মহাসড়কের পাশে-সড়ক বিভাজনে বসে সুপারির হাট, ভোগান্তি চরমে
বাগেরহাট সদর উপজেলার দরগার মোড় এলাকার খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে এবং সড়ক বিভাজনে সপ্তাহে দুদিন (শুক্র ও মঙ্গলবার) বসে সুপারির হাট। এ হাটের জন্য নির্ধারিত স্থান না থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানেই সুপারির বেচাকেনা করেন। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মহাসড়কে চলাচলরত দ্রুতগতির যানবাহন, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।
সরেজমিনে বাগেরহাটের দরগা হাট গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত সুপারি ভ্যান, নসিমন ও অটোরিকশা যোগে বিক্রির জন্য এ হাটে নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা মহাসড়কের দুপাশসহ সড়ক বিভাজনে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে সুপারি বেচাকেনা করছেন। দোকানগুলোর দুপাশ দিয়েই চলাচল করছে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। কেউ কেউ মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে বস্তায় সুপারি ভরছেন। ক্রেতারাও ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে সুপারি কিনছেন। অন্যদিকে সুপারি পরিবহনের জন্য থামিয়ে রাখা যানবাহনের জন্য দেখা দিয়েছে যানজট। ব্যবসায়ীরা বলছেন সুপারি ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত কোনো স্থান না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়কের মাঝখানে বসে সুপারি বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন: চিকিৎসক দম্পতির ছাদ যেন বনসাইয়ের রাজ্য
কচুয়ার মঘিয়া থেকে সুপারি বিক্রি করতে আসা রবিউল বলেন, এই হাটে সুপারি ক্রয়-বিক্রয় করতে কোনো খাজনা দিতে হয় না। তাই এখানে সুপারি বিক্রি করলে বেশি লাভ হয়। যখন সুপারির সিজন থাকে তখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০-৬০ জন ব্যবসায়ী রাস্তার পাশে ও সড়ক বিভাজনে বসে সুপারি বেচাকেনা করেন। একটু লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার ওপর বসে বেচাকেনা করছি। সব সময় ভয়ে থাকি কখন যে গাড়ি উঠে যায় গায়ের ওপর।
সুপারি বিক্রি করতে আসা আরেক বিক্রেতা রবিউল বলেন, বিভিন্ন বাগান থেকে সুপারি সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করতে এসেছি। এই হাটে সুপারির দাম মোটামুটি ভালো পাওয়া যায়। এছাড়া পরিবহন ব্যবস্থা ভালো থাকায় এ হাটে ক্রেতারা বেশি আসেন। কিন্তু আমাদের জন্য নির্ধারিত কোনো স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তার মাঝখানে সড়ক বিভাজনের ফাঁকা জায়গায় বসে সুপারি বিক্রি করছি। এতে বেশ ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। যখন ক্রেতারা সুপারি কিনতে আসে তখন তারা সড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে সুপারি দেখেন। এসময় এখান থেকে বাস ট্রাক চলাচলে অসুবিধা হয়। যদি সুপারি বিক্রেতাদের জন্য নির্ধারিত স্থান করে দেওয়া হয়, তাহলে এই ভোগান্তি কমবে। একই সঙ্গে মহাসড়কে স্বাচ্ছন্দ্যে যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে। আমরাও নিশ্চিন্তে বেচাকেনা করতে পারবো।
আরও পড়ুন: বিদ্যালয়ের পাশে ক্রাশিং মিল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে পাঠদান
সুপারি কিনতে আসা পলক দেবনাথ বলেন, শহর থেকে এখানে খুব সহজে আসা যায় তাই দোকানের জন্য সুপারি কিনতে এসেছি। সপ্তাহে দুদিন এখানে সুপারি কিনতে আসি। কিন্তু সুপারি কেনার সময় মহাসড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সুপারি পছন্দ করে কিনতে হয় এ সময় দুর্ঘটনার বেশ ঝুঁকি থাকে। হাটের জন্য যদি নির্ধারিত স্থান ঠিক করে দেওয়া হলে আমাদের এই ভোগান্তি কমবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, মহাসড়কের ওপর ব্যবসায়ীদের দোকান নিয়ে বসার ফলে জনভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে।
বাগেরহাটের তালুকদার পরিবহনের ড্রাইভার রাকিবুল রাজ বলেন, বাগেরহাটের দরগার হাট এলাকায় মঙ্গলবার ও শুক্রবার সাপ্তাহিক হাট হওয়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় ভিড় একটু বেশি থাকে। বর্তমানে আবার রাস্তার পাশে প্রচুর ব্যবসায়ী সুপারি বেচাকেনা করছে। এতে আমাদের যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে ব্যপক সমস্যা হচ্ছে। প্রায় সব সময়ই এখানে যানজট লেগে থাকে। এছাড়া রাস্তার পাশে ও সড়ক বিভাজনের মধ্যে সুপারি বাজার বসায় অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যেই পরিবহন চলাচল করতে হয়।
আরও পড়ুন: সংকটের অজুহাতে জয়পুরহাটে ৮৭ টাকার স্যালাইন ২৫০
বাগেরহাট ষাট গম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, দরগার হাটটি মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। হাটের দক্ষিণ পাশে সবজি, মাছ ও হাঁস-মুরগি বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থান থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে সুপারি ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত কোনো স্থানের ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই সড়কের পাশে বসে তাদের সুপারি বিক্রি করতে হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সুপারি ও নারকেল বিক্রির জন্য স্থান নির্ধারণ করতে পারবো।
আব্দুল্লাহ আল ইমরান/জেএস/এএসএম