ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রৌহা বিলে মাছ ধরার উৎসবে এসে খালি হাতে ফিরলেন সবাই

এসকে রাসেল | প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত (হাইত) উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো কিশোরগঞ্জের প্রসিদ্ধ ও সুপ্রাচীন রৌহা বিলে।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের ওই বিলে চলে মাছ ধরার উৎসব। বিভিন্ন অঞ্চলের শিশু-কিশোরসহ কয়েক হাজার মাছ শিকারী আসেন বিলে। তবে মাছের দেখা পাননি কেউ। ফিরেছেন খালি হাতে। আবহমান বাংলার এমন ঐতিহ্যকে রক্ষায় মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত বিলগুলোকে রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি বলে মনে করেন মাছ শিকার করতে আসা লোকজন।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নে সুপ্রাচীন রৌহা বিলের মাছ ধরা উৎসবের ঐতিহ্য শত বছরের। প্রায় সাড়ে ৩০০ একর আয়তনের এ প্রসিদ্ধ বিলের পরিচিতি এলাকা ছাপিয়ে আশপাশের জেলার মানুষ ও মাছ শিকারীদের কাছে সুপরিচিত।

রৌহা বিলে মাছ ধরার উৎসবে এসে খালি হাতে ফিরলেন সবাই

প্রতি বছর কার্তিক মাসে দিনব্যাপী চলে বিলে মাছ ধরার উৎসব। দেশের অন্য অঞ্চলে জাল ও পলোসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে মাছ ধরার এ উৎসবকে বাউত বলে ডাকলেও কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে তা হাইত উৎসব হিসেবে বেশি পরিচিত।

বুধবার রৌহা বিলে অনুষ্ঠিত হাইত উৎসবে অংশ নিতে এ জেলার লোকজনের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার কয়েক হাজারো লোক ছুটে আসেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন যানবাহন এবং হেঁটে এসে রৌহা বিল পাড়ের চারপাশে অবস্থান নিতে থাকেন তারা। ফজরের আজানের আগে থেকেই পলো, জাল, জালি, কোঁচ, এক কাটা, টে কাটাসহ মাছ ধরার নানা ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে বিলের পানিতে নামতে শুরু করেন। আনন্দ সূচক হাঁকডাকে চলে হাজারো মানুষের মাছ ধরার এ উৎসব। তবে এবার তেমনটা মাছের দেখা মেলেনি।

রৌহা বিলে মাছ ধরার উৎসবে এসে খালি হাতে ফিরলেন সবাই

স্থানীয় বাসিন্দা আপেল মাহমুদ বলেন, ঢাকায় চাকরি করি। মাছ ধরার জন্য ঢাকা থেকে বাড়ি এসেছি। ঐতিহ্যবাহী এ রৌহা বিলে প্রতি বছরই হাইতে অনেক মাছ পাওয়া যায়। তাই অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষ হাইতে আসেন। এবার মাছ পাওয়া যায়নি। ছোট ছোট পোনা অবৈধ জাল দিয়ে মেরে ফেলার কারণেই দিন দিন মাছ কমে যাচ্ছে।

মো. আবু তাহের নামে একজন বলেন, ৪০ বছর ধরে বিলে মাছ ধরার উৎসবে আসি। এবার মাছ না পেয়ে খালি হাতে ফিরছি। কিছুদিন আগে ভারী বর্ষণের কারণে পানি বেশি হওয়ায় মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া পানি বেশি হওয়ায় জমির ধান গাছ পচে পানি নষ্ট হয়ে মাছ মারা গেছে তাই হয়তো বিলে মাছ কম।

রৌহা বিলে মাছ ধরার উৎসবে এসে খালি হাতে ফিরলেন সবাই

বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে আসা নীরব নামে এক কিশোর বলে, গত বছর অনেক মাছ ধরেছিলাম। এবার মাছ নেই। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

পাকুন্দিয়া উপজেলার হোসেন্দী থেকে রৌহা বিলে মাছ ধরার উৎসবে আসা হারুন নামের এক যুবক বলেন, অনেক দূর থেকে মধ্যরাতে রওনা হয়ে এ বিলে মাছ ধরতে এসেছি। গতবার অনেক মাছ পেয়েছিলাম। এবার মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি।

রৌহা বিলে মাছ ধরার উৎসবে এসে খালি হাতে ফিরলেন সবাই

এ বিষয়ে কথা হলে চৌদ্দশত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাহার আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সবাই মাছ ধরা উৎসবের সঙ্গে কম বেশি পরিচিত। শৈশব-কৈশোরে এমন সব মাছ ধরা উৎসবে অংশগ্রহণের অমলিন স্মৃতিও আছে আমাদের। কিন্তু দিনে দিনে প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রমগুলো বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এ প্রজন্মের শিশু-কিশোররা এমন নির্মল আনন্দের মাছ ধরা উৎসব থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও কিশোরগঞ্জের সুপ্রাচীন ও প্রসিদ্ধ রৌহা বিল আজও এমন ঐতিহ্য ধারণ করে আসছে। সত্যিই গর্ব ও আনন্দের। গ্রাম বাংলার আবহমান কালের এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির স্বার্থে অবাধে গণ মৎস্য সম্পদ আহরণের এমন অভয়াশ্রমগুলোর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। প্রশাসনের কাছে অবৈধ কারেন্ট জাল ও রিং জাল বন্ধের কঠোর আহ্বান জানাই। তাহলেই এমন মাছ ধরার উৎসবে এসে খালি হাতে ফিরতে হবে না কাউকে।

এসকে রাসেল/এসজে/জেআইএম