মিরসরাইয়ে মৃৎশিল্পীদের ঘরে ঘরে হাহাকার
আধুনিকতার ছোঁয়া ও বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশের চিরচেনা মৃৎশিল্প। মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপটও। চাহিদা কম থাকায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মৃৎশিল্পীদের ঘরে ঘরে হাহাকার নেমে এসেছে। তবে কেউ কেউ বাপ-দাদার পেশা কোনোরকম টিকিয়ে রেখেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় কুমারপাড়া পূর্ব মলিয়াইশ ও করেরহাট ছত্তরুয়া গ্রামে অবস্থিত। ওই পাড়ায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছে শতাধিক কুমার পরিবার। পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কুমারদের। সরকার মাটি কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকায় তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী মাটি পাচ্ছে না। এখন আয় কমেছে তাদের। অর্ধাহার আর অনাহার এখন তাদের নিত্যসঙ্গী।
পুতুল রানী পাল নামে এক গৃহবধূ বলেন, এখন আর আগের মতো কুমারপাড়ার আয় নেই। আগে আমরা চরকা দিয়ে বিভিন্ন রকম বাসন-কোসন ও খেলনা তৈরি করতাম। কিন্তু এখন চরকা ব্যবহার হয় না। কারণ চরকা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে ভালো দাম পাওয়া যায় না। এখন মাটিও কিনে আনতে হয়। আমরা শুধুমাত্র সামান্য আয়ে সংসার টিকিয়ে রেখেছি।
ছত্তরুয়া গ্রামের কয়েকজন মৃৎশিল্পী আক্ষেপ করে জানান, পিঠা তৈরির ছাঁচ (খোলা) তৈরি করতে সাত-আট দিন সময় লাগে। অথচ এত কষ্টের পরও কাঙ্ক্ষিত লাভ হয় না।
করেরহাট ইউনিয়নের রাখাল চন্দ্র পাল বলেন, ব্যবসা মন্দার কারণে আমাদের এখানকার মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারী বাপ-দাদার এ পেশা ধরে রেখেছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। সামান্য আয়ে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে।
গৃহবধূ শিউলি রানী পাল বলেন, আমরা গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি পরিবার চালাতে মৃৎশিল্প তৈরি করি। কিন্তু পরিশ্রম অনুযায়ী লাভ পাই না।
কুমারপাড়ার অধিবাসী হারাধন পাল বলেন, সরকারি বেসরকারি কোনো সুযোগ সুবিধাই পাই না। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা শুধুমাত্র নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রকম প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পরে সব ভুলে যান।
কুমারপাড়ার বাসিন্দা আশিষ পাল বলেন, এখন সব জায়গায় প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। প্লাস্টিকের কারণে আমরা মার খাচ্ছি। তবুও কষ্ট করে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। তবে আমাদের সন্তানরা মনে হয় না এ পেশায় টিকতে পারবে।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জাগো নিউজকে বলেন, স্বাধীনতার আগ থেকে আমার ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত এ পাল গ্রামে অনেক পরিবার মাটি দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে আসছে। সরকার মাটি কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকায় তারা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান মাটি সংগ্রহ করতে পারছে না। এছাড়া মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদাও আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, মৃৎশিল্প আমাদের আদি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সবার এগিয়ে আসা উচিত। তাদের সমস্যার কথা শুনেছি। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি।
এসজে/এএসএম