ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুষ্টিয়া পৌরশহর

বিভিন্ন জটিলতায় থমকে আছে ফোরলেনের কাজ

আল মামুন সাগর | কুষ্টিয়া | প্রকাশিত: ১১:৫৯ এএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩

আওয়ামী লীগ নেতার করা মামলায় কুষ্টিয়া পৌরশহরের ফোর লেন সড়ক নির্মাণ কাজে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা জজের বাস ভবনের সীমানা প্রাচীরেও ওয়ালেও আটকা পড়েছে সড়কের নির্মাণ কাজ। এমন জটিলতায় ফোর লেন সড়কের পাশাপাশি উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সৌন্দর্য্য বন্ধনের কাজও শেষ করতে পারছে না সড়ক বিভাগ।

২০২১ সালে শুরু হওয়া কাজটির মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। মূল শহরের মধ্যে কাজ বন্ধ থাকায় আশপাশের বাসিন্দাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শহরকে যানজটমুক্ত করার পাশাপাশি পথচারীদের হাঁটার জন্য শহরের সড়কটি দুলেন থেকে ফোরলেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। সড়কের পাশাপাশি দুপাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ডিভাইডারের মধ্যে বৃক্ষ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প আছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার বটতৈল থেকে শহরের মূল পয়েন্ট মজমপুর গেট এবং মজমপুর গেট থেকে ত্রিমনোহী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে ফোরলেনে উন্নীতকরণ কাজের জন্য ২০২১ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বটতৈল থেকে মজমপুর গেট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার কাজের কার্যাদেশ পায় জহরুল লিমিটেড আর মজমপুর থেকে ত্রিমহোনী পর্যন্ত কাজ পায় স্পেকটা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।

কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা। গত বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়ানো হয় ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডিসেম্বরে কাজ শেষ না হওয়ায় ফের চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের হিসাব মতে এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দুটি স্থাপনার বাউন্ডারি ওয়াল ও একটি মামলায় আটকে গেছে শতকোটি টাকা প্রকল্পের এ কাজটি। মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী অংশে পড়েছে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা জজের বাড়ি। এখানে সীমানা প্রচীর না ভাঙায় আটকে আছে কাজ। দুটি সীমানা প্রচীরের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। একই সঙ্গে মঙ্গলবাড়িয়া গড়ই নদীর পাশে কয়েকটি বহুতল ভবন সড়কের জায়গা দখল করে নির্মাণ হয়েছে। এসব কারণে নকশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না সড়ক বিভাগ। প্রভাবশালীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ম্যানেজ করে তাদের স্থাপনা ঠিক রাখছে। এসব কারণে ড্রেন ও সড়কের কাজে জটিলতা বাড়ছে।

মজমপুর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ফোরলেন সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ দীর্ঘদিন। প্রভাবশালীদের বাড়ি রক্ষার জন্য সড়ক বিভাগ তৎপর। যে কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে পুলিশ লাইনের বাউন্ডারি ওয়ালের জমি না পাওয়ায় কাজ করতে পারছেন না ঠিকাদার। জমিটির মালিকানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভায় বিষয়টি সমাধানের পথ খোঁজ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সভা হয়েছে। সেখানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন। সমাধানের দিকে যাচ্ছে।

এদিকে জেলা জজের বাড়ির সীমানা প্রচীর ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ সেটা হবে কেউ বলতে পারছে না।

অপরদিকে বটতৈল থেকে মজমপুর গেট এলাকার কাজে বাগড়া দিয়েছে একটি মামলা। বিসিক শিল্পনগরীর সামনে ১ কিলোমিটার সড়কের জমির মালিকানা দাবি করেন আদালতে মামলা করেছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক। জমিটির মালিকানা দাবি করে হাইকোর্টে রিট করায় সড়ক বিভাগ ৩০০ মিটার অংশের সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।

সড়ক বিভাগের দাবি, জায়গাটি জেলা পরিষদের। আর রেজাউল হকের দাবি তাদের ক্রয়করা সম্পত্তি। যার কারণে তিনি মামলা করেছেন। ফলে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করা যায়নি। ড্রেনের কাজও এ অংশে নকশা অনুযায়ী করা যায়নি।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য বসা হয়েছিল। তবে এখনো সমাধান হয়নি।

এদিকে বারবার সময় বাড়ায় কাজের গতি কমে যাচ্ছে। মজমপুর গেটে সড়ক ঘেঁষে রেললাইন চলে গেছে। এখানেও দোকান থাকায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। যানবাহন চালকসহ সাধারণ মানুষকে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ড্রেনেজ কাজ শেষ না হওয়ায় বৃষ্টি হলে অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে যাচ্ছে। এতসব জটিলতা কাটিয়ে কবে কাজ শেষ হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু।

তিনি বলেন, কাজ শুরুর আগে এসব জটিলতা নিরসন না করায় এখন সমস্যা বাড়ছে। এতে সরকারের কাজ যথাসময়ে শেষ না হাওয়ায় জনভোগান্তি তৈরি হচ্ছে।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খাঁন জাগো নিউজকে বলেন, দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রচীর ও একটি মামলার কারণে ফোরলেন সড়কের কাজ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আমরা মামলার কারণে ৩০০ মিটার বাদ রেখে সড়কের কাজ করছি। জমি বুঝে না পাওয়ায় ড্রেনের পাশাপাশি সড়কের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বিষয়গুলো সমাধানের জন্য কাজ চলছে। এ বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে একটি ফেজের কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে।

এসজে/এমএস