ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

রাজবাড়ী

বৃষ্টিতে নষ্ট নিচু অঞ্চলের শীতকালীন সবজিক্ষেত, হতাশ কৃষক

রুবেলুর রহমান | রাজবাড়ী | প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩

কয়েকদিনের টানা বর্ষণে রাজবাড়ীতে নষ্ট হয়েছে নিচু অঞ্চলের আগাম জাতের শীতকালীন সবজিক্ষেত ও বীজতলা। বৃষ্টিতে মিষ্টিকুমড়া, ফুল কপি, টমেটো, মুলা, মরিচ, বেগুন, উস্তের চারায় দেখা দিয়েছে পচন রোগ। এখনো অনেক সবজি ক্ষেতে জমে আছে বৃষ্টির পানি। কিছু কিছু ক্ষেতের পানি নামলেও মাটি ভেজা। ফলে চারা সংকটে নতুন করে আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। এছাড়া ক্ষেত না শুকানো পর্যন্ত মুড়কাটা পেঁয়াজ আবাদ করতে পারছেন না তারা।

অভিযোগ আছে, বৃষ্টিতে সবজিক্ষেত ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত মাঠে আসেননি কোনো কৃষি কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটু লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয় রাজবাড়ীর বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে নদী তীরবর্তী নিচু ও অন্য এলাকার উঁচু জমিতে সবজি আবাদ হয়। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিচু অঞ্চলের চাষিরা। এরমধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাটের উড়াকান্দার পদ্মা নদীর তীরবর্তী ফসলি মাঠে বৃষ্টিতে ব্যাপক সবজি ও বীজতলার ক্ষতি হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর রবি মৌসুমে রাজবাড়ীতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৯ হেক্টর জমির ফসল।

উড়াকান্দা মাঠের সবিজ চাষি আজাদ, লুৎফর, আলমসহ অনেক চাষি জানান, এখন নতুন করে চাষ করলেও দাম তেমন একটা পাবেন না। আগাম চাষ করে বৃষ্টিতে তাদের উড়াকান্দার মাঠের কয়েকশ বিঘার টমেটো, বেগুন, উস্তে, ফুলকপি, মুলাসহ অন্য ক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এখনো অনেক জমিতে পানি জমে আছে। যেসব জমির পানি নেমে গেছে, সেগুলোর চারা পচতে শুরু করেছে। জমি না শুকানো পর্যন্ত নতুন করে চাষও করতে পারছেন না চাষিরা। এরওপর চারা নিয়েও আছে দুশ্চিন্তা। কারণ বৃষ্টিতে চারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত মাঠে কোনো কৃষি কর্মকর্তা তাদের পরামর্শ বা সহযোগিতা করতে আসেননি।

চাষি রওশন আলী সরদার বলেন, এবারের বৃষ্টিতে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তেমনিভাবে পিছিয়েও গেছি। কারণ আগাম চাষ করতে পারলে কিছু টাকা পয়সা পেতাম। এখন সবই শেষ। সবজি আবাদ করতে চাইলেও পানি থাকায় এখনো জমিতে যেতে পারছি না। কিছু কিছু জমিতে আগাম আবাদ করে আমার মতো অনেকে বৃষ্টিতে ধরা খেয়েছেন।

আরেক চাষি করম আলী শেখ বলেন, বৃষ্টিতে আমার আধা বিঘা জমির মুলা পচে গেছে। এক বিঘা জমিতে শাক ছিল, যার কিছু ভালো আছে আর সব নষ্ট হয়েছে। এখন সেগুলো বেছে বেছে তুলছি।

চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, কিছু টাকা পাওয়ার আশায় প্রতিবছরের মতো এবারও আগাম সবজির আবাদ করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি। এবার চার বিঘা জমিতে টমেটো, এক বিঘায় বেগুন, এক বিঘায় ফুলকপি, এক বিঘায় উস্তে চাষ করেছি। এতে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের কেউ আমাদের পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য মাঠে আসেনি। নতুন করে যে আবাদ করবো, সেই চারাও নেই।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, ৫ অক্টোবর একদিনে প্রায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা এক বছরের মধ্যে সর্বচ্চো। ফলে রাজবাড়ীতে সবজি ও আমন ফসলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৩১৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে আমন ফসল, সবজি, মাসকলাই আছে। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পর জরিপ করে দেখেছি ফসল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ফলে আক্রান্তের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ খুবই সামান্য।

তিনি আরও বলেন, শীতকালীন সবজির আবাদ এখনো ভালোভাবে শুরু হয়নি। কিছু কিছু বীজতলা তৈরি করা হয়েছে পলিথিন আবৃত সিট দিয়ে। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পর মুড়কাঁটা পেঁয়াজসহ অন্য সবজি আবাদ করা হবে। সবজির চারার বয়স কম হলে, সে ক্ষেত্রে পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষেত নষ্ট করে নতুন করে আবাদসহ বালাইনাশক ও কীটনাশক স্প্রের পরামর্শ দিচ্ছি।

রুবেলুর রহমান/এসজে/এএসএম