ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দুই লাখ টাকায় সুস্থ হবে দেড় বছরের সাইমুন

জেলা প্রতিনিধি | ঝিনাইদহ | প্রকাশিত: ০৫:৫৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৩

জন্মের পর থেকে শরীরের তুলনায় মাথার আকার বড় হওয়ায় শিশু সাইমুনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তার বাবা-মা। মাথা বড় হাওয়ার কারণে হাঁটতে বা বসতে পারে না শিশুটি। মা-বাবার কোলে ও বিছানায় শুয়েই সময় কাটে তার। চিকিৎসক বলেছেন মাথায় পানি জমার কারণে এমনটা হয়েছে। অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে, খরচ হবে ২ লাখ টাকা। কিন্তু দিনমজুর বাবা আরেক আলী মন্ডলের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। তাই বাড়িতেই রেখে দিয়েছেন সন্তানকে।

শিশু সাইমুন ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার ভাটবাড়িয়া গ্রামের আরেক আলি মন্ডল ও আফরোজা খাতুন দম্পতির সন্তান। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাইমুনের বয়স এক বছর চার মাস।

ভাটবাড়িয়া গ্রামে আরেক আলির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাটকাঠির বেড়ার দুটি কক্ষ, ওপরে টিনের ছাউনি। বারান্দায় একটি চৌকির ওপর শুয়ে আছে শিশু সাইমুন। তাদের উঠানে আশপাশের বাড়ির অন্য শিশুরা বিকেলে খেলাই মেতেছে। শিশুরা খেলছে আর মাঝেমধ্যে সাইমুনকে দেখতে ছুটে আসছে চৌকির কাছে। ওই শিশুদের সঙ্গে খেলা করার কথা ছিল সাইমুনেরও। কিন্তু তার শরীরের থেকে মাথা অনেক বড় হওয়ায় চলাফেরা করতে পারে না। সবসময় শুয়ে থাকে আর কাঁদে।

জানা গেছে, ভিটেবাড়ির মাত্র ৫ শতক জমি ছাড়া আর কোনো জমি নেই আরেক আলি মন্ডলের। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে অভাবে চলতো সংসার। সেই ঘোড়ার গাড়িটিও এখন নেই। অভাবের তাড়নায় বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখন অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কৃষিকাজ করে যে অর্থ উপার্জন করেন তাতেই চলছে সংসার। কিন্তু ছোট ছেলের অপারেশনের জন্য টাকা জোগাড় করতে পারছেন না কোনোভাবেই।

সাইমুনের বাবা আরেক আলি মন্ডল বলেন, জন্মের আড়াই মাস পরে লক্ষ্য করি ছেলের মাথাটা বড়। তখন আমরা স্থানীয়ভাবে অনেক ডাক্তার দেখালেও কোনো কাজ হয় না। পরবর্তীতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানান মাথায় পানি জমেছে। অপারেশন করে পানি বের করতে হবে, তাহলেই সুস্থ হয়ে যাবে। আর এরজন্য খরচ হবে ২ লাখ টাকা। পরে ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যাই, সেখানেও ডাক্তার একই কথা বলেন।

আরেক আলি বলেন, দিনমজুরের কাজ করে এতো টাকা জোগাড় করতে পারছি না। যার জন্য ছেলেকে ডাক্তারের কাছেও নিতে পারছি না। অপারেশন করাতেও পারছি না। এখন বাড়িতেই রেখে দিয়েছি। দিন দিন ছেলেটার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। দয়া করে আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য আপনারা একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমার সন্তানটি স্বাভাবিক জীবন পাবে। আপনাদের অনুরোধ করছি একটু এগিয়ে আসুন আমার সন্তানের জন্য।

সাইমুনের মা আফরোজা খাতুন বলেন, আমার ছেলেটাকে নিয়ে খুবই অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছি। আমার ছেলের বয়স যখন দেড় থেকে দুই মাস তখন অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারিনি। যতটুকু জোগাড় করেছিলাম তাতে কিছুই হবে না। সবাই যদি সহযোগিতা করতো তাহলে আমার ছেলের অপারেশন করাতে পারতাম।

তিনি বলেন, গ্রামে মারামারির জন্য আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছিল। আমরা ঘরবাড়ি ছেড়ে এক বছর গ্রামের বাইরে অন্য শহরে ছিলাম। এখন আবার এসেছি। কিন্তু ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছি না। ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, তিনি বলেছিলেন ছেলের মাথায় পানি জমেছে। অপারেশন করতে হবে। কিন্তু অপারেশন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। এখন যদি কেউ সহযোগিতা করে আমার ছেলেকে আবার ডাক্তার দেখাতে পারবো, অপারেশন করাতে পারবো।

প্রতিবেশী মো. জামাল উদ্দীন জানান, আমাদের গ্রামের সবাই জানে আরেক আলীর ছোট ছেলেকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছেন। আমরা গ্রামের লোকজন যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেছি, কিন্তু তাতে তার অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি এই বাচ্চাটির জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে তাহলে ছেলেটি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।

শৈলকুপা উপজেলার সাড়ুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাহামুদুল হাসান জানান, শিশু সাইমুনের কথা শুনেছি। আরেক আলি মন্ডল খুবই দরিদ্র, সে আমার দলীয় লোক হোক বা দলের বাইরের লোক হোক আমি তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য কিছু সহযোগিতা করবো।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ রয়েছেন, তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/এএসএম