মাসে দেড় লাখ টাকার ভেলপুরি বিক্রি করেন দেলোয়ার
ছোট একটি প্লেটে চারটি মাত্র ভেলপুরি। বিভিন্ন মশলা দিয়ে সাজিয়ে খেতে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। পাশেই সাজানো দুটি পাত্রে ঝাল-টক ও মিষ্টি-টক, আছে বোম্বে মরিচও। যে যার পছন্দমতো টক ও ঝাল নিয়ে খাচ্ছেন ভেলপুরি। মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়ে দেলোয়ারের এই ভেলপুরির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতেও। বিকেল হলেই মানুষ লেকপাড়ে ছুটে আসেন ভেলপুরি খেতে। সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে খান এই ভেলপুরি।
প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিক্রি হয় এই ভেলপুরি। এক বেলায় দেলোয়ারের বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। মাসে তার বিক্রি গড়ে দেড় লাখ টাকার বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মন্টারপোল এলাকার দেলোয়ার মোল্যা (৫২) এক সময় ঢাকায় ভেলপুরি বিক্রি করতেন। স্ত্রী আফসানা বেগম ও ছেলে লালনকে (২১) নিয়ে তার সংসার। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার পর গত প্রায় ছয় বছর ধরে মাদারীপুরে আছেন। মাদারীপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শকুনি লেকপাড়ের শহীদ কানন চত্বরের এক কোণায় বসে শুরু করেন ভেলপুরি বিক্রি। অল্পদিনেই লেকে ঘুরতে আসা মানুষজনের প্রিয় খাবার হয়ে ওঠে তার এই ভেলপুরি। আশে-পাশের মানুষজনও তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে লেকপাড়ে ছুটে আসেন দেলোয়ারের ভেলপুরি খেতে।
প্রতিদিন পলিথিনের দুটি প্লাস্টিকের বস্তায় করে ভেলপুরি ও নানা ধরনের মশলা নিয়ে আসেন দেলোয়ার। সঙ্গে থাকে ছোট একটি টেবিল। সেই টেবিলের ওপর ভেলপুরির বস্তা ও আলু, ডিমসহ নানা উপাদান দিয়ে তৈরি মশলার বড় একটি পাত্র রাখা থাকে। একটি ছোট প্লেটে চারটি ভেলপুরি দিয়ে তার মধ্যে বিভিন্ন মশলা ও ক্রেতাদের পছন্দমতো বোম্বাই মরিচ দিয়ে খেতে দেওয়া হয়। এরপর ঝাল টক ও মিষ্টি টক, যে যার পছন্দমতো নিয়ে খেতে থাকেন। দাম মাত্র ২০ টাকা।
অল্পদামে এই মজাদার খাবার খেতে প্রতিদিন বহু মানুষ ভিড় করেন। শুক্র ও শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে লাইনে দাঁড়িয়ে খেতে হয় এই ভেলপুরি। কোনোদিন ৫ হাজার আবার কোনোদিন ছয় হাজার টাকার বিক্রি হয়। এতে করে মাসে তার গড়ে দেড় লাখ টাকার বেশি ভেলপুরি বিক্রি হয়। এছাড়াও ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন বিশেষ দিনে ভেলপুরি বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার।
দেলোয়ারের ভেলপুরি খেতে আসা বাগেরপাড়ের শাহিনুর বেগম বলেন, আমি আমার দুই সন্তান নিয়ে এখানে ভেলপুরি খেতে এসেছি। দেলোয়ার মোল্যার ভেলপুরি অনেক মজাদার। প্রায়ই এখানে এসে ভেলপুরি খাই।
আরেক ক্রেতা আজিজুর রহমান খান বলেন, আমি খোয়াজপুর থেকে আমার পরিবার নিয়ে লেকপাড়ে ঘুরতে এসেছি। এখানে এলেই ভেলপুরি খাই। আমার বাচ্চারা ভেলপুরি অনেক পছন্দ করে।
ভেলপুরি বিক্রেতা দেলোয়ার মোল্যা বলেন, আমি প্রথমে ঢাকায় ভেলপুরি বিক্রি করতাম। পরে ছয় বছর হলো মাদারীপুরে এসে লেকপাড়ে বিক্রি করি। অল্পদিনেই আমার ভেলপুরির চাহিদা বেড়ে যায়। দূর থেকে এসেও অনেকে আমার ভেলপুরি খায়। দিনে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। এতে করে গড়ে মাসে দেড় লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়। তাছাড়া ঈদসহ বিশেষ দিনগুলোতে বেচা-কেনা করতে আমার হিমশিম খেতে হয়।
মাদারীপুরের আদর্শ কল্যাণ ফোরামের চেয়ারম্যান মো. এসকান্দার আলী মাতুব্বর বলেন, বিকেল হলেই মানুষজন এখানে ভেলপুরি খেতে ভিড় করেন। বিশেষ করে নারীদের বেশি খেতে দেখা যায়। এখানকার ভেলপুরি খুব মজাদার। সবার প্রিয়। আমিও মাঝে মধ্যে আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে খাই।
মাদারীপুরের উন্নয়ন সংস্থা ‘দেশগ্রাম’র নির্বাহী পরিচলক এবিএম বজলুর রহমান খান রুমি বলেন, দেলোয়ার মোল্যা নিজেই তার কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। এটা খুব ভালো। এতে করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি অনেকেই নিজ উদ্যোগে কাজ করার আগ্রাহ পাবেন।
এফএ/এএসএম