পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল
ভাঙ্গায় বাঁধভাঙা খুশির জোয়ার, সাজসাজ রব
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর এবার চালু হচ্ছে রেল সংযোগ প্রকল্পের। রাত পোহালেই এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ ফরিদপুরবাসীর। পুরো রেলপথটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের রেল যোগাযোগ সহজ হবে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পারি দিয়ে ভাঙ্গা রেল জংশনে পৌঁছাবেন। সেখানে সংবাদ সম্মেলন শেষে ভাঙ্গার জনসভায় যোগ দেবেন। দুপুরের দিকে ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারের মধ্যে প্রথম দফায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করা হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু হয়ে ছুটবে ট্রেন, প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত মাওয়া
দীর্ঘ ছয় বছর পর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগমনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরসহ ভাঙ্গাজুড়ে শুরু হয়েছে সাজসাজ রব ও উৎসবের আমেজ। প্রধানমন্ত্রীকে বরণে নেতাকর্মীরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। বর্ণিল সাজে সেজেছে ভাঙ্গা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ ও খুশির জোয়ার লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কজুড়ে টাঙানো হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র, ব্যানার ও ফেস্টুন। এছাড়া বিভিন্ন পদধারী নেতাদের বড় বড় ব্যানার ও সরকারের উন্নয়নের চিত্র শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন মোড়ে, রাস্তার পাশের দেওয়াল ও গাছে গাছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রস্তুতি সভা, প্রচার মিছিল ও লিফলেট বিতরণও শেষ হয়েছে। মাঠ, মঞ্চ তৈরিসহ বিভিন্ন রাস্তায় তোরণ নির্মাণের মতো প্রস্তুতি শেষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ফরিদপুর জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তারাও জনসভায় যোগদানের প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: যে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নিয়াজ জামান সজীব জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন। যেখানে লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণের টার্গেট রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলাজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। আশা করি ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচলের উদ্বোধনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ রেলপথ বাণিজ্যিকভাবে খুলে দেওয়া হবে। এ দফায় ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে। শুরুতে তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকছে। এগুলো হচ্ছে মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর। মুন্সিগঞ্জের নিমতলা স্টেশনটিও চালুর চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু দিয়ে ছুটবে ট্রেন, উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা হেড কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ও ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের (এসপি) দিকনির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সজাগ রয়েছে পুলিশ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেন, সবধরনের প্রস্তুতি শেষ। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি সফলভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, ভাঙ্গাসহ জনসভাস্থল ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
এন কে বি নয়ন/এসআর/এএসএম