পদ্মা সেতু হয়ে ছুটবে ট্রেন, প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত মাওয়া
আরও একটি স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে জাতি। উদ্বোধন হতে চলেছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙা অংশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরইমধ্যে ৮২ কিলোমিটার রেলপথসহ মাওয়া স্টেশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া রেলস্টেশনে ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আয়োজন করা হয়েছে সুধীসমাবেশ। সুধী সমাবেশ ও উদ্বোধনকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়।
আরও পড়ুন: যে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী
সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, মাওয়া স্টেশনজুড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পুরো এলাকাজুড়ে সাজসাজ রব। ব্যাপক নিরাপত্তা কর্মীদের উপস্থিতি। প্রধানমন্ত্রীকে বহনের জন্য প্রস্তুত করা বিশেষ ট্রেনের মহড়া চলছে। মঞ্চসহ সমাবেশস্থল তৈরি, সৌন্দর্যবর্ধনসহ আনুষঙ্গিক কর্মযজ্ঞ শেষ পর্যায়ে। বিভিন্ন ফেস্টুন-ব্যানারে ছেয়ে গেছে আশপাশ। খানিক বাদে আকাশপথে মহড়া দিচ্ছে র্যাবে টহল হেলিকপ্টার। সমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা মনিটরিং করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশন প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন সরকারপ্রধান। উপস্থিত থাকবেন দেশি-বিদেশি ১৬০০ অতিথি। পরে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করে টিকিট কেটে দুপুর ১২টায় মাওয়া স্টেশন থেকে ট্রেনে যাত্রা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৩৮৬ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রেনযাত্রার সুযোগ পাবেন। দুপুর ১টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিকেলে ভাঙ্গার কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামের জনসভায় ভাষণ দেবেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু দিয়ে ছুটবে ট্রেন, উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ জানান, ৮২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী ট্রেন ভ্রমণ করবেন প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এরইমধ্যে মাওয়া স্টেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। নিমতলা, শ্রীনগর, শিবচর, ভাঙ্গাসহ বাকি স্টেশনগুলোর কাজও ৯৫ শতাংশ শেষ। ট্রেন চলার জন্য চালু করা হয়েছে কম্পিউটার-বেসড সিগন্যাল সিস্টেম। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর বহরের আগে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন মাওয়া থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে ছাড়া হবে।
জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থার বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানান মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার আসলাম খান।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু দিয়ে অক্টোবর থেকে চলবে ছয়টি ট্রেন
তিনি বলেন, আশা করছি অনুষ্ঠানটি সুন্দর, সাফল্যমণ্ডিত ও আনন্দমুখর হবে। জেলা পুলিশের আট শতাধিক, রেলওয়ে পুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স কাজ করছে বলে জানান এসপি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধনকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজনের সবকাজই প্রায় শেষ। আগামীকাল সকালের আগেই বাকিটুকু কাজ শেষ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়ালো পদ্মা সেতুর টোল আদায়
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুু প্রকল্পে বৃহৎ পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখানকার কোনো মানুষই অধিগ্রহণ নিয়ে অসন্তোষ নয়। কালকের দিনটির জন্য মানুষজন উন্মুখ হয়ে আছে। তারা আনন্দ-উল্লাসে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা রেল প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এসআর/এমএস