ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ম্যাজিস্ট্রেট সংকটে অভিযান ব্যাহত

বরিশালে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল

শাওন খান | প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৩

বরিশালে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল। বাড়ছে জ্বালানি তেল বিক্রির অবৈধ দোকানের সংখ্যাও। এর ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় জনবল ও ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত আইন অনুসারে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না। লাইসেন্স ছাড়া পেট্রোলিয়াম আমদানি, মজুত, পরিবহন, বিতরণ, উৎপাদন, শোধন ও মিশ্রণসহ আইনের কোনো ধারা বা লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘনকারীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

অথচ বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে, এমনকি কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই বরিশালের অলি-গলিতে ছোট-বড় দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ। আর এভাবে জ্বালানি তেল বিক্রিতে সাধারণ মানুষ থাকছে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায়। ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও কাপড়ের দোকানেও চলছে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিন বিক্রি। বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প থেকে সংগৃহীত এবং চোরাইপথে কেনা তেল বিক্রি করা হচ্ছে দোকানগুলোতে। পাশাপাশি মাপে কম দেওয়ারও প্রবণতা রয়েছে অবৈধ তেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বরিশাল জেলায় ২৯টি (ট-ফরম) পেট্রোল পাম্পের জ্বালানি তেল বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (এম-ফরম) পেট্রোলিয়াম বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের। পাশাপাশি আরও ৪২টি প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় শ্রেণির (ঝ-ফরম) পেট্রোলিয়াম বিক্রির বৈধ লাইসেন্স ও অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া (চ-ফরম) এলপিজি সিলিন্ডার ও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন রয়েছে ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের।

অথচ সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে শুধু বরিশাল শহরেই প্রায় সহস্রাধিক জ্বালানি তেল বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকান যেমন অবৈধ, তেমনি এদের তেল সংগ্রহ পদ্ধতিও অবৈধ। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে রয়েছে অগণিত অবৈধ জ্বালানি তেল বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ বিক্রির দোকান। আর এসব দোকান থেকে নাশকতাকারীরা খুব সহজেই জ্বালানি ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, এসব দোকানগুলোতে ভেজাল ও নিম্নমানের তেল ব্যবহার করায় গাড়ির ইঞ্জিনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি এর কালো ধোঁয়ায় পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। এই তেলে যাত্রীদের চোখ জ্বলে এবং ইঞ্জিন থেকেও বেশি শব্দ হয়। এসব ভেজাল চোরাই তেলে গাড়ির মাইলেজ কমে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর দুজন পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার জাগো নিউজকে জানান, জ্বালানি তেলে ভেজাল হচ্ছে সত্য। তবে পাম্পগুলোতে কম হচ্ছে। বেশি ভেজাল করে খোলা বাজারের দোকানিরা।

এদিকে খোলাবাজারে জ্বালানি তেল বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ বিক্রির দোকান মালিকরা বলছেন, তারা সরাসরি ডিপো বা ডিলারদের কাছ থেকে তেল ক্রয় করে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন। ডিপো থেকে যদি তেলে ভেজাল বা নিম্নমানের তেল দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে তাদের কিছু করার থাকে না।

এ ব্যাপারে বিস্ফোরক পরিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক বিমল কুমার মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল ও ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম পেলে তাদের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। তাদের অফিসে যোগাযোগ করে অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা না করার বিষয়টি জানানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া পেট্রোল পাম্প মালিকদের বলা হয়েছে ভেজাল জ্বালানি তেল বিক্রয় না করার জন্য।

এফএ/এএসএম