চার বছর হয় না ড্রেন পরিষ্কার
দু’দিনের বৃষ্টিতে ডুবছে যশোর
যশোরে টানা দু’দিনের বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে শহরের নিম্নাঞ্চল। ড্রেন উপচে পানি প্রবেশ করেছে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানি ঢুকে পড়েছে উঠানে, ঘরবাড়িতে। ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। এতে শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে পানি জমে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ড্রেন পরিষ্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ নাগরিকদের।
যশোর বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, যশোরে গত বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সন্ধ্যায় মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। পরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে মাঝারি ও এদিন রাতে ভারী বর্ষণে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত দুই দিনে যশোরে ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে বুধবার ৩৫ মিলিমিটার ও বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১১৯ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত শহরের অনেক এলাকায় পানি জমে রয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
যশোর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যশোর শহরের ড্রেনের পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই যশোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অন্তত ২০টি সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শহরের খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, শহরের পিটিআই সড়কের একপ্রান্ত, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, বেজপাড়া চিরুনিকল মোড়, মিশনপাড়া, আবরপুর, বিমানবন্দর সড়ক, ষষ্ঠীতলাপাড়া, শংকরপুর চোপদারপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, নীলরতন ধর রোডসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ময়লা-আবর্জনায় ভরা নোংরা পানি সড়ক ছাপিয়ে ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও।
ভারী বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে আছে পৌর এলাকার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড। বসত ঘরে পানি ঢুকেছে। ঘরে ও বাইরের জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে আছেন ওই ওয়ার্ডের মানুষেরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও শহরের সমস্ত পানি নিষ্কাশনের পথ যে ড্রেন তা গত চার বছর পরিষ্কার করে না পৌরসভা, সে কারণেই এ ভোগান্তি।
শহরের শংকরপুর এলাকার গোলাম মাজেদ বলেন, যশোর শহরের পানি নিষ্কাশন হয় শহরের দক্ষিণ পাশের বিল হরিণায়। সেখান থেকে মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে পানি বেরিয়ে যায়। কিন্তু গত চার বছর ধরে বিল হরিণায় পানি নিষ্কাশনের যে ড্রেন তা পরিষ্কার করে না পৌরসভা।
শহরে খড়কি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের দক্ষিণ ফটক (গেট) থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান ও আপন মোড়ে বৃষ্টির পানি জমেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন মুকুল নামে এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, খড়কি এলাকাটা তুলনামূলক নিচু। রাস্তার পাশে পয়োনিষ্কাশনের নালা দিয়ে অন্য এলাকার পানি আসে। ওই পানি বের হতে পারছে না। পৌরসভার কাছে পানি নিষ্কাশন ও সড়ক সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয় না।
শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত ১০ বছর শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না।
পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ওই পানি বের করার জন্য খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পৌরসভা গত ১০ বছরেও সেই উদ্যোগ নিতে পারেনি।
এদিকে পৌরসভাভুক্ত অনেক সড়কের অবস্থাই এখন নাজুক। একদিন বৃষ্টি হলেই সড়কের অবস্থাগুলোতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনসাধারণের। অধিকাংশ সড়কের বিটুমিন উঠে গেছে। সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পৌর শহরে এমন রাস্তার সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ চলছে। দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলেন, শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা ও নালা সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। এ বিষয়ে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ কাজটি শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।
এফএ/জেআইএম