ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পদ্মার তীব্র ভাঙন

‘কতবার বাড়ি সরানো যায়, আর পারছি না বাবা’

সোহান মাহমুদ | প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে কমছে পানি। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তীব্র ভাঙন। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫ কিলোমিটারের বেশি এলাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজারো মানুষ। এখনো হুমকির মুখে সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেই তেমন তৎপরতা। এতে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্না পাড়া, চটক পাড়া, সর্দার পাড়া, ঘোষ পাড়ার দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন চলছে। এতে প্রায় ১০০ টির বেশি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। এতে সর্বস্বান্ত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। হঠাৎ ভাঙন শুরু হওয়ায় অনেক মানুষের জিনিসপত্র নদীতে তলিয়ে গেছে। আর হুমকিতে আছে নারায়ণপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, সাইক্লোন কেন্দ্র, চরনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

এদিকে নারায়ণপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি এলাকা থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দশরশিয়া প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে মাষকলাইসহ বিভিন্ন প্রায় ১৫০ বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এখানেও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন মানুষ।

নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্নাপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ উদাহরণ দিয়ে বলেন, শুনেছি কারবালার মাঠে নাকি কেউ অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। গত কয়েকদিন থেকে আমাদের অবস্থাও এমন হয়েছিল। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। আমাদের সব শেষ আর কিছু রইলো না। আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি এখন পানির নিচে। আর বাড়ি তো তলিয়ে গেছেই। আমি সংশ্লিট কারও কাছে গিয়েও আশ্রয় পাইনি।

এদিকে পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে নারায়ণপুর দারুল হুদা আলিম মাদরাসা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে। মাদরাসার প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙন আতঙ্কে মাদরাসাটি স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ আছে।

বান্নাপাড়া গ্রামের মেহেদি হাসান বলেন, দুদিন আগে আমাদের বাড়িতে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। এ সময় সব জিনিসপত্র সরাতে গিয়ে আমাদের ১০ মণের বেশি ধান নদীতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমাদের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমরা কাউকে পাশে পাইনি।

বান্নাপাড়ার বাসিন্দা সাবেক মেম্বার এনামুল হক পাতান বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে এবং কমলে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। টানা ভারী বর্ষণ আর বর্তমানে উজানের ঢলের তোড়ে নদী ভাঙন হচ্ছে। প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এতে ভোগান্তিতে পড়ে এলাকার হাজারো মানুষ।

এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদ আলী বলেন, পদ্মা নদীর পাশেই আমার বাড়ি এখন পর্যন্ত ছয় বার সরানো হলো। কিন্তু রেহাই নেই। ভেঙেই যাচ্ছে। এতে আমার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রেহেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, কতবার বাড়ি সরানো যায়? আর পারছি না বাবা। প্রতিবছর আমাদের এ অবস্থা হয়। গরু-ছাগল নিয়ে খুব বিপদে আছি।

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বেনজির আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, যত পানি কমছে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। ইউনিয়নের মানুষ খুবই কষ্টে আছে। ভাঙনের ভায়ে রাতে তারা ঘুমাতেও পারে না। কারণ হঠাৎ ধসে যাচ্ছে বড় বড় এলাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কয়েকশ মানুষ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে নারায়ণপুর ইউনিয়ন ৩০ লাখ টাকার কাজ আমরা করেছিলাম। কিন্তু সেগুলো ভেঙে তলিয়ে গেছে। আর আমরা ৯ কোটি ২০ লাখ টাকার আবেদন অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখনো অনুমোদন হয়নি। তাই নদীর ভাঙন ঠেকাতে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। ভাঙনের খবর সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তাৎক্ষণিক অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন ঠেকানো অসম্ভব। অন্তত ২৫ কোটি টাকার কাজ করলে এই ভাঙন থামানো যেতে পারে।

এসজে/এএসএম