‘চুরি করতে এসেছিলাম কিন্তু সত্যি আমি চোর না’ রক্তমাখা চিঠিতে চোর
‘আমি চুরি করতে এসেছিলাম, কিন্তু সত্যি আমি চোর না। আমার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ, তাই এটা করতে বাধ্য হলাম। আর শাস্তি পেলাম, পায়ে সেলাই। আমার পা অনেকখানি কেটে গিয়েছে, আমাকে সবাই মাফ করে দিন। আমি এইচএসসি পাস। কিন্তু জীবনে কিছু করতে পারিনি।’
মসজিদে চুরি করতে এসে এসব কথা লিখে গেছেন এক যুবক। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ থানা জামে মসজিদে এমনই ঘটনা ঘটেছে। চিঠিতে রক্তের দাগ লেগে আছে।
মসজিদে চুরি করা ওই যুবকের নাম আপন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে।
মসজিদ কমিটি ও পুলিশ সূত্র জানায়, শনিবার (১ অক্টোবর) দিনগত রাতে দৌলৎগঞ্জ থানা জামে মসজিদে চুরি করতে আসেন ওই যুবক। চুরি করার সময় তিনি পায়ে আঘাত পান এবং রক্ত বের হয়। বের হওয়ার সময় রক্তমাখা হাতে একটি চিঠি লিখে রেখে যান। পরে ওই রাতেই গুরুতর আহত অবস্থায় অভিযুক্তকে আটক করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। চুরির যাবতীয় মালামাল উদ্ধার করে মসজিদ কমিটির কাছে হস্তান্তরও করেছেন জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবিদ হাসান।
স্থানীয়রা জানান, মসজিদে কাচের দরজা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে। কাচের দরজা ভাঙতে গিয়ে ওই যুবকের হাত-পা কেটে যায়। তিনি মসজিদের বাইরে থাকা দানবাক্সটিও ভাঙার চেষ্টা করেন। মসজিদ থেকে রসিদ বই, সাউন্ড সিস্টেম, ইয়ার ফোন, মাইক সেটের অংশ বিশেষ চুরি করেন ওই যুবক।
মসজিদের মুয়াজ্জিন আরাফাত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো রোববার ফজরের নামাজের আজান দিতে গিয়ে দেখতে পাই, মসজিদের কাচের দরজার তালা ভাঙা এবং পাশে অনেক রক্ত। মসজিদের মালামাল চুরি হয়ে গেছে এবং দানবাক্স ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে একটি খাতার পাতায় রক্তমাখা চিঠিও পাই।’
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পর চোরকে আটক ও মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। চুরি যাওয়া মালামাল ওসি আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। চোর ছেলেটি গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাকে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশের তত্ত্বাবধানে যশোর হাসপাতালে রেফার করেছে বলে জেনেছি।’
এ বিষয়ে জীবননগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবিদ হোসেন বলেন, ওই রাতেই সন্দেহজনকভাবে পুলিশ তাকে আটক করে আহত অবস্থায় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তাকে প্রথমে চোর হিসেবে শনাক্ত করা যায়নি। তার অস্বাভাবিক আচরণ ছিল। পরে চোর হিসেবে শনাক্ত করা গেছে। মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদের কাচের দরজা ভাঙতে গিয়ে সে গুরুতর জখম হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
‘ওই যুবকের মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে জানিয়েছেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে। মালামাল উদ্ধার করে মসজিদ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের কোনো অভিযোগ নেই।’
হুসাইন মালিক/এসআর/এমএস