ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁও

বছরে ২ কোটি টাকার সবজি দিচ্ছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান

তানভীর হাসান তানু | ঠাকুরগাঁও | প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০২৩

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা জরিনা খাতুন। নিজের কোনো জায়গা জমি না থাকায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পান তিনি। সেই ঘরের পাশে অল্প জমিতে গড়ে তুলেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। সেই বাগানের উৎপাদিত সবজি থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে কিছু শাক-সবজি বিক্রি করেন। এতে প্রতি মাসে তার আয় হয় প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, বর্তমানে সব ধরনের শাক-সবজির দাম চড়া। তবে সেই আঁচ লাগেনি আমার ঘরে। বরং আমি বাড়ির আঙিনায় লাগানো শাক-সবজি খেয়ে ভালোভাবে দিন পার করছি। সঙ্গে প্রতিবেশীদের প্রয়োজন মেটাচ্ছি।

জরিনার মতো পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছেন একই আশ্রয়ণ প্রকল্পের খাদেমুল ইসলাম। সেখান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি ও প্রতিবেশীদেরও দেন তিনি। আগে প্রতি মাসে বাজার থেকে শাক-সবজি কিনতে যে টাকা খরচ হতো তা পুরোটাই এখন সঞ্চয় হয় খাদেমুল ইসলামের।

ঠাকুরগাঁও কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় এমন পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছে জেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার। এসব পুষ্টি বাগান থেকে প্রতিবছর উৎপাদিত হচ্ছে কোটি টাকার সবজি। ফলে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবারগুলোতে বাড়ছে স্বনির্ভরতা।

jagonews24

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালে দেশব্যাপী এ রকম পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও আদা, হলুদ চাষের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সারাদেশে ৫ লাখ পুষ্টি বাগান তৈরির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। ফলে সারাদেশের কমপক্ষে ৫ লাখ পরিবার নিরাপদ সবজি খেতে পারবে। পাশাপাশি পরিবারগুলোর সাশ্রয় হবে মোটা অঙ্কের অর্থ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক এসব বাগানে চাষ হচ্ছে শিম, মরিচ, শাক, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলুসহ আদা ও হলুদ। সুভিধাভোগীরা বলছেন, প্রতিটি বাগান থেকে বছরে প্রায় ২০০ কেজির বেশি শাক-সবজি উৎপাদন সম্ভব।

কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এসব পুষ্টি বাগান থেকে ৪-৫০ শতাংশ পুষ্টি ও ৫-৩০ শতাংশ প্রোটিন চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর দেড় শতাংশ জমির সবজি বাগানে বছরে ৩০০ কেজি সবজি উৎপাদন হলে জেলায় দুই হাজার ৭০০টি সবজি বাগানের উৎপাদিত সবজির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭০০ কেজি। প্রতিকেজি সবজি গড়ে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে এর বাজার মূল্য ২ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ফলে সরকারের পুষ্টি বাগানের আওতায় থাকা পরিবারগুলোর সাশ্রয় হচ্ছে বৃহৎ অংকের টাকা।

জরিনা খাতুন বলেন, তার বাগানে লালশাক, পুঁইশাক ও কচুশাক আছে। এগুলো তিনি নিজে খান, প্রতিবেশীদের দেন, আবারও বিক্রিও করেন। বেগুন, কাঁচামরিচ বিক্রি করেছেন। মাসে ১ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারেন তিনি।

মালেকা নামের আরেকজন বলেন, আমার বাগানে ঢ্যাঁড়শ, বরবটি, করলা, ঝিঙে, ধুন্দুল ও মরিচ আছে। সামান্য জায়গায় কত ফসল না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ছয় মাস ধরে আমরা কোনো সবজি কিনে খাইনি। বাগান থেকে যা পাই তাই অনেক। শুধু তাই নয়, এক হাজার টাকার সবজিও বিক্রি করেছি আমি।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, এখানে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। অল্প জমিতে অনেক সবজি চাষ করা যায়। অনুরোধ করবো এমন একটি নিরাপদ সবজি বাগান যেন সবাই করে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ এই আলোকে প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উপকরণ সহায়তা দিয়ে পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। বসতবাড়ির আঙিনায় এ ধরনের পুষ্টি বাগান থেকে সহজেই পরিবারের সদস্যদের পুষ্টিচাহিদা পূরণ হওয়ায় এখন বাগান করার দিকে ঝুঁকছে পরিবারগুলো।

তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব প্রকল্পের আওতায় জেলায় ২ হাজার ৭টির বেশি পুষ্টি বাগান আছে। এসব বাগান থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে এক থেকে দেড় মণ শাক-সবজি বিক্রিও করছেন অনেকে। ফলে তারা আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আগে যে জমিগুলো পতিত থাকতো সেটা কিন্তু পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে চাষের আওতায় আসছে। পুষ্টির চাহিদা পূরণেই আমরা এই ধরনের প্রকল্প করি। বিভিন্ন বীজ কোম্পানি এবং ব্যক্তিও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আহ্বানে বীজ সহায়তা প্রদান করে এ কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন।

এফএ/এমএস