সাবেক এমপির ১০ একর জমিতে ড্রাগন চাষ, লাভের টাকায় চলে এতিমখানা
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবুল কাশেম। দেড় বছর আগে তার ১০ একর পতিত জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। চলতি মৌসুমে ড্রাগন ফল বিক্রি করে ১৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে। সে টাকার বেশিরভাগ অংশ যাচ্ছে সাবেক এ সংসদ সদস্যের নিজ উদ্যোগে নির্মিত এতিমখানায়। এতে সুরক্ষিত হচ্ছে এতিমখানাসহ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেলদুয়ার উপজেলায় দেউলি ইউনিয়নের আলালপুর গ্রামে সাবেক ওই সংসদ সদস্যের ১৮ একর জমির আছে। এর ৮ একর জমিতে বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, সুফিয়া কাশেম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, আবুল কাশেম ট্রাস্ট মসজিদ, আল জামিয়াতুল কাছেমিয়া ও জামেরুন্নেছা এতিমখানা, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক কবরস্থান গড়ে উঠেছে। বাকি ১০ একর পতিত জমিতে চাষ হয়েছে ড্রাগন ফল।
ড্রাগন বাগানের কৃষক মো. আব্দুল কাদের বলেন, ১০ একর জমির ওপর ড্রাগন বাগান করা হয়েছে। বাগানে ড্রাগনের চারা আছে ১৫ হাজার। আমাদের বাগানে লাল, গোলাপী, বেগুনি, হলুদ ও সাদা জাতের ড্রাগন আছে। এখন ড্রাগন ফলের মৌসুম। তবে আমাদের বাগানে ফল বেশি বড় হচ্ছে না। কেজিতে ধরছে পাঁচ ছয়টা।
তিনি আরও বলেন, ড্রাগন ফল বাজারজাত করতে কোনো কষ্ট হয় না। আমরা স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। এছাড়া নিজস্ব খরচে ঢাকায় পৌঁছে দিলে পাইকাররা ন্যায্যমূল্যে দেন। বর্তমানে দৈনিক ৬০০-৮০০ কেজি ড্রাগন ফল উত্তোলন করা যায়। তবে আমরা তা না করে মাসে মাসে উত্তোলন করছি। স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি দুই থেকে আড়াইশ টাকা দরে বিক্রি করছি ড্রাগন ফল।
বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী কবিরসহ কয়েকজন জানায়, ড্রাগন ফলের বাগানে সজ্জিত আমাদের বিদ্যাপীঠ। এ বাগান দেখে শুধু আমরাই আনন্দ পাই না, বিভিন্ন এলাকা থেকেও মানুষ আসছেন। এছাড়া আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অনেক জায়গায় থাকায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায়। শিক্ষা ব্যবস্থাও ভালো।
আল জামিয়াতুল কাছেমিয়া ও জামেরুন্নেছা এতিমখানার মুহতামিম হাফেজ ইমরান হোসেন বলেন, এতিমখানা ও হিফজ শাখায় বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২জন। তাদের খাবার ও ভরণ-পোষণেরও দেখভাল করছেন প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবুল কাশেম। এতিমখানার শিক্ষার্থীদের খরচ মেটাতে তিনি ১০ একর পতিত জমিতে ড্রাগন বাগান করেছেন। ওই ফল বিক্রির টাকা ব্যয় হচ্ছে এতিমখানার শিক্ষার্থীদের পেছনে।
বোরহানুল উলুম আহমাদিয়া ইয়াছিনিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইব্রাহিম খলিল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের মাদরাসার চারদিকে ড্রাগন ফলের বাগান। বাগানটি দেখতে অসাধারণ। এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে বেড়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েই এ ড্রাগন বাগান করেছেন। তার অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্ধ না হয়, সে লক্ষ্যেই এ বাগান করা। বাগান থেকে উপার্জিত টাকা এতিমখানাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় ব্যয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও আবুল কাশেম ট্রাস্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান টাঙ্গাইল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ১৯৭৩ সালে আমার বাবা মারা যান। ওই বছরই আমি একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করি। ধীরে ধীরে আরও স্কুলসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়েছি। প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনার ব্যয় মেটাতে আমার এ ড্রাগন বাগানের উদ্যোগ।
আবুল কাশেম আরও বলেন, ১৮ একর জমির ৮ একর জমিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মিত হয়েছে। বাকি ১০ একর পতিত জমিতে ড্রাগন বাগান করা হয়েছে। বাগানের বয়স দেড় বছর। এ বছর ১৩-১৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পেরেছি। ড্রাগন ফল বিক্রির টাকা এতিমখানাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে। ওই টাকা আমি আমার ব্যক্তিগত কোনো কাজে খাটাই না। আমার ইচ্ছে সব সম্পত্তি আমি ট্রাস্টের নামে দিয়ে যাবো। সম্পত্তির আয়ে চলবে আমার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো।
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলে, আগামীতে প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে পরনির্ভরশীল না হয় সেই লক্ষ্যেই বাগান করার উদ্যোগ। আমার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানায় যাতে দুই থেকে তিনশ এতিম সন্তান থাকতে পারে। তাদের আর্থিক কোনো কষ্ট না হয় সেটিকেই প্রাধান্য দিয়ে আমি ড্রাগন চাষে এগিয়ে যাচ্ছি। বাগানটি করতে আমাকে দেশের অনেক জায়গায় ঘুরতে হয়েছে। সর্বশেষ নাটোর থেকে ড্রাগনের চারা এনে বপন করা হয়েছে।
এসজে/জিকেএস