ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

তিন অন্ধের উপার্জনের সম্বল নিয়ে গেলো চোর

জেলা প্রতিনিধি | ফেনী | প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর মন্দিয়া গ্রামের তিন অন্ধ সাইফুল ইসলাম (৩৫), শহীদুল ইসলাম (৩২) ও মোমিনুল ইসলাম(২৮)। বাবা মো. মোস্তফা ২০ বছর আগেই মারা যান। মা ছকিনা বেগম কষ্ট করে কোলে পিঠে করে বড় করেন তিন সন্তানকেই। বড় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে না জড়িয়ে তিন ভাই মিলে শুরু করেন বাড়ির সামনে ছোট্ট একটি মুদি দোকানের ব্যবসা। যা তাদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে সেই দোকানের টিন কেটে সব মালামাল নিয়ে গেছে চোরের দল। আয়ের অবলম্বন দোকানের সব মালামাল হারিয়ে এখন তারা পাগলপ্রায়। দোকানে প্রায় ৬০ হাজার টাকার মালামাল থাকলেও চুরি হয়ে যায় ৫০ হাজার টাকার মালামাল।

তিন সহোদর জানান, জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও মানুষের কাছে হাত না পেতে চেষ্টা করেছেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সবার সহযোগিতায় তারা একটি মুদি দোকান দিয়েছিলেন। এখন তাদের সব শেষ।

তিন সহোদরের মা ছকিনা বেগম বলেন, সাইফুলের স্ত্রী রেজিয়া বেগম, শহীদুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা বেগমকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার তিন ভাইকে চালাতে হয়। অনেক বছর আগে আমার স্বামী মো. মোস্তফা মারা যান। তিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু তাদের কোনো অসম্মানজনক পেশায় দেওয়ার কথা চিন্তাও করিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছকিনা আরও বলেন, ভাইদের দেওয়া সাহায্যে ও নিজের তৈরি করা ডালা, কুলা, চাঁইসহ গৃহস্থালি জিনিস বিক্রি করে এক-আধপেটা করে নিজের সন্তানদের বড় করিনি। কিন্তু এক পর্যায়ে সংসারের ছয় জন সদস্যের ভরণপোষণ আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। বড় ছেলে সাইফুলের বয়স যখন ১৩ বছর তখন আমার দেওয়া সামান্য পুঁজিতে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চকলেট, চুইংগাম, আচার বিস্কুট বিক্রি শুরু করে। ধীরে ধীরে অপর দুই সন্তানও তার ক্ষুদ্র ব্যবসায় যুক্ত হয়। তিন ভাইয়ের সামান্য সঞ্চয় আর আমার ডালাকুলা বিক্রির কিছু আয় দিয়ে পাশাপাশি মানুষের সহযোগিতায় বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান দিয়েছিল। এখন সব শেষ।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শহীদুল ইসলাম বলেন, সরকারি বেসরকারি কোনো সংস্থা বা কোনো ব্যক্তি উদ্যোগে যদি আমাদের বিনা সুদে কিছু টাকা ঋণ হিসেবে দেয় তাহলে আবার মালামাল কিনে স্বাবলম্বী হতে পারবো।

এ বিষয়ে শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, চুরির ঘটনা শুনেছি। চোরদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে দোকানটি পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা হবে।

ছাগলনাইয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদ্বীপ রায় জাগো নিউজকে বলেন, চুরির ঘটনা জানা ছিল না। কেউ অভিযোগ দেয়নি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসজে/এএসএম