ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বরগুনায় আউশের দামে হিসাব মিলছে না কৃষকের

জেলা প্রতিনিধি | বরগুনা | প্রকাশিত: ১০:৪৮ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বরগুনায় কয়েক বছর ধরে আউশ ধানের বাম্পার ফলন হলেও এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। একই সঙ্গে অনাবৃষ্টি ও ভারি বৃষ্টির কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আউশের আবাদ। অন্যদিকে উৎপাদিত ধানের সঠিক দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর আমনের আবাদের ৪৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৭ হাজার হেক্টর। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ কম আবাদ করা হয়েছে। চাষের শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং ধান বের হওয়ার সময় ভারি বৃষ্টির কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। গত বছর হেক্টর প্রতি চার টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে। সেখানে এ বছর তিন টন ধান উৎপাদন হয়েছে।

কৃষকরা জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আউশ ধান রোপণ করা হয়। এ বছর কৃষকরা বিরি-৪৮ ও বিরি-২৭ দুই জাতের ধান রোপণ করেছে। হেক্টর প্রতি চার থেকে সাড়ে চার টন ধান উৎপাদন হতো। সেখানে এ বছর হেক্টর প্রতি তিন টনেরও কম ধান উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। বাজারে প্রতিমণ ধান ৮০০ থেকে সারে ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আমন রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

বরগুনা সদর ,বেতাগী, আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ধান কাটা উৎসব চলছে। কেউ আবার কাটা ধান মাড়াই করতে ব্যস্ত। মাড়াই স্থান থেকে ধান সরাসরি বাজারে নিচ্ছেন কৃষকরা।

বরগুনা সদর উপজেলার খাজুরতলা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ২৮ শতাংশ জমিতে আউশ আবাদ করেছি। বীজতলা থেকে শুরু করে আবাদ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ছয় হাজার ৩৫০ টাকা। নানা কারণে এবছর আউশ ধানের ফলন খারাপ হয়েছে। যে টাকা খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও আসেনি। এছাড়া বাজারে ধানের দাম গত বছরের চেয়ে কম।

নিজাম হাওলাদার নামের আরেক কৃষক বলেন, ১০০ শতাংশ জমিতে আউশ আবাদ করেছিলাম। ২০ হাজার টাকা খরচ করে ২১ মণ ধান পেয়েছি, বাজারে ৮২০ টাকা ধরে ১৭ হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি। আউশ আবাদে আমার তিন হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরের চেয়ে তুলনামূলক এ বছর আউশ ধানের ফলন কম হয়েছে। চাষের শুরুতে অনাবৃষ্টি এবং ধান বের হওয়ার সময় ভারি বৃষ্টির কারণে উৎপাদন কমেছে।

আরও পড়ুন: বন্যার পানি নামতেই ফের স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা

আমতলীর চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের কৃষক জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন, তিন বছর ধরে জমি আবাদ করিনি। এবছর ভালো লাভের আশায় আউশ ধান আবাদ করেছিলাম। কিন্তু তেমন ধান হয়নি। ১২০ শতাংশ জমিতে মাত্র ৩০ মণ ধান পেয়েছি। তাতে ১৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সোহেল রানা বলেন, ৩২ হাজার টাকা খরচ করে দুই একর জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছিলাম ।কিন্তু তেমন ধান হয়নি। ৮৪০ টাকা মণ দরে মাত্র ২৪ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় এবছর খরচও উঠেনি।

আমতলীর ধান ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ফলন কম হওয়ায় এ বছর বাজারে কম ধান আসছে। বাজারে ধানের দামও কম। প্রতিমণ ধান ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইছা বলেন, লক্ষ্যমাত্রা প্রায়ই অর্জিত হয়েছে। তবে আবাদের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও ফসল বের হওয়ায় সময় ভারী বর্ষণে ধান কিছুটা কম হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম একটু বেশি থাকলে কৃষক লাভবান হতো।

আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে ৬৭ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ হাজার হেক্টর কম জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। আউশ উৎপাদন কমে গেছে।

জেএস/এএসএম