জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ
সেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রফিকুলের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও
ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে না নিয়ে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করে সংসার চালানো সেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম মুন্সির পাশে দাঁড়ালেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বসে তার হাতে এক বছরের বিক্রির জন্য পিপারমেন্ট লজেন্স ও বাঁশি তুলে দেন ইউএনও। এসময় লজেন্স ও বাঁশি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন রফিকুল ইসলাম।
১ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজে ‘দুচোখ হারিয়েও থেমে নেই রফিকুলের জীবন সংগ্রাম’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদটি তা শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের নজরে আসে। পরে তিনি বিষয়টি খোঁজ খবর নিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্রকে নির্দেশ দেন। খোঁজ খবর নিয়ে তিনি রফিকুল ইসলামকে সহযোগীতা করেন।
আরও পড়ুন: দুচোখ হারিয়েও থেমে নেই রফিকুলের জীবন সংগ্রাম
রফিকুল ইসলামের বাড়ি শরীয়তপুরের পালং থানার ভুচূড়া গ্রামে। বিকেলে হলে কানার বাজার ও পালং বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি ও পিপারমেন্ট লজেন্স বিক্রি করতে দেখা যায় তাকে। এ লজেন্স বিক্রির সামান্য আয় দিয়েই চলে তার সংসার।
রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫২ সালের দিকে দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। তার বয়স যখন চার বছর তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। গরিব বাবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় হারাতে হয়েছে দুচোখ। তবে হেরে যাননি তিনি। ১০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। ভিক্ষাবৃত্তিকে ভীষণভাবে অপছন্দ করায় শুরু করেন কাজের সন্ধান। এরপর তিনি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাসে আর ট্রেনে ঘুরে ঘুরে লজেন্স বিক্রি করতে থাকেন।
১৯৭৩ সালে লজেন্স বিক্রির কোনো একসময় পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার কাছ থেকেই রপ্ত করেন বাঁশি বাজানো। এরপর বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করেন। যা এখন পর্যন্ত ধরে আছেন। তার সংসার জীবনে স্ত্রী রোকেয়া বেগম, দুই ছেলে আব্দুর রহিম ও সোহাগ মুন্সি রয়েছেন। যদিও ছেলেরা বিয়ের পরে তাদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকছেন।
আরও পড়ুন: ‘রাস্তায় বের হলে সবাই অন্যভাবে তাকায়, মনে হয় আমি মানুষ না’
রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার বছর বয়স থেকে টাইফয়েড জ্বরের কারণে আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সেই থেকেই আমার দুঃখের জীবন। আমি শুনেছি ভিক্ষা করা আল্লাহ পছন্দ করে না। তাই নিজে নিজেই কাজের সন্ধান করে ঢাকায় বাসে, ট্রেনে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করি। আমি এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই সংগ্রাম করে যাবো।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, রফিকুল ইসলাম এক অদম্য মানুষ। তিনি সমাজের মানুষের জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। যিনি কিনা দুচোখ হারিয়েও ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ না করে লজেন্স আর বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। রফিকুল ইসলামকে নিয়ে প্রচারিত সংবাদটি আমাদের নজরে আসলে তাকে আমার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসি। রফিকুল ইসলামকে আমরা নগদ অর্থ দিতে চাইলে ওনি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ওনি এক বছরের বিক্রির জন্য লজেন্স ও বাঁশি কিনে দিতে বলেন। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে এক বছরের বিক্রির জন্য লজেন্স ও বাঁশি কিনে দিয়েছি।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত শরিফুলের
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, রফিকুল ইসলাম একজন ব্যতিক্রমী জীবন সংগ্রামী মানুষ। রফিকুল ইসলামের সম্পর্কে আমি প্রথমে মাধ্যমে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি। পরে বিষয়টি আমার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে তাকে সহযোগীতা করে। আমাদের পক্ষ থেকে তার জন্য সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে।
জেএস/জেআইএম
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ সচিবালয়ের আগুনে পোড়া কুকুরের মরদেহ বলে দেয় এটি ষড়যন্ত্র
- ২ অসুস্থ বাবাকে দেখতে গিয়ে ভাই-স্বামীসহ প্রাণ হারালেন বকুলা বেগম
- ৩ স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও শান্তি দিতে চাচ্ছে না: ডা. শফিকুর রহমান
- ৪ আওয়ামী লীগের মতো নিশি রাতের নির্বাচন চাই না: আলতাফ হোসেন
- ৫ জমজমাট খেজুর গুড়ের বাজার, দেড়শ কোটি টাকা বিক্রির আশা